দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৮
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّـهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদিগকে
ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই অগ্নি হইতে রক্ষা কর, যাহার ইন্ধন মানুষ ও পাথরসমূহ হইবে, যাহাতে কঠোর স্বভাব শক্তিশালী ফেরেশতাগণ
নিয়োজিত রহিয়াছেন। তাহারা কোন বিষয়ে আল্লহ তায়া’লার নাফরমানী করেন না এবং তাহাই করেন যাহা তাহাদিগকে হুকুম দেওয়া
হয়। (সূরা তাহরীমঃ ৬)
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّـهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
এই মুসলমানগণ এইরূপ যে, যদি আমি
তাহাদিগকে দুনিয়ার রাজত্ব দান করি তবে তাহারা নিজেরাও নামাযের পাবন্দী করিবে এবং
যাকাত প্রদান করিবে এবং (অন্যদেরকেও) নেক কাজ করিতে বলিবে এবং অসৎ কাজ হইতে নিষেধ
করিবে। আর সমস্ত কাজের পরিণাম তো আল্লহ তায়া’লারই ক্ষমতাধীন
(সুরা হাজ্জঃ ৪১)
الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَـٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّـهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
আর আল্লহ তায়া’লার দ্বীনের
জন্য মেহনত করিতে থাক, যেমন মেহনত করা
আবশ্যক, তিনি সারা বিশ্বে আপন
পয়গাম পৌঁছানোর জন্য তোমাদিগকে নির্বাচন করিয়াছেন। এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের
প্রতি কোন প্রকার কঠোরতা করেন নাই,
(অতএব
দ্বীনের কাজ অতি সহজ এবং ইসলামের যে সমস্ত হুকুম তোমাদিগকে দেওয়া হইয়াছে উহা
দ্বীনে ইবরহীমের অনূকুল, কাজেই) তোমরা
তোমাদের পিতৃপুরুষ ইবরহীমের দ্বীনের উপর কায়েম থাক। আল্লহ তায়া’লা কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বেও এবং কুরআন
নাযিল হওয়ার মধ্যেও তোমাদের নাম মুসলমান রাখিয়াছেন–অর্থাৎ অনুগত ও ওয়াদাপালনকারী। তোমাদিগকে আমি এইজন্য
নির্বাচন করিয়াছি যাহাতে রসূল (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম) তোমাদের পক্ষে সাক্ষী হন আর তোমরা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হও। (সূরা
হাজ্জঃ ৭৮)
ফায়দাঃ অর্থাৎ কিয়ামাতের দিন অন্যান্য উম্মতগণ অস্বীকার করিবে যে, নবীগণ আমাদিগকে তাবলীগ করেন নাই তখন নবীগণ
উম্মাতে মুহা’ম্মাদিয়াকে
সাক্ষী হিসাবে পেশ করিবেন। এই উম্মত সাক্ষী দিবে যে, নিঃসন্দেহে পয়গম্বরগণ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করিয়াছেন। যখন
প্রশ্ন করা হইবে তোমরা কিভাবে জানিলে?
তখন
উত্তর দিবে যে, আমাদিগকে আমাদের
নবী বলিয়াছেন। অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম নিজ উম্মতের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন।
কোন কোন মুফাসসিরীন আয়াতের মর্মার্থ এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লহ তায়া’লা বলিয়াছেন,
আমি
তোমাদিগকে এইজন্য নির্বাচন করিয়াছি,
যেন
রসূলগণ তোমাদিগকে বলিয়া দেন এবং শিক্ষা দেন এবং তোমরা অন্যান্যদের বলিয়া দাও ও
শিক্ষা দাও। (কাশফুর রহমান)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৩-৭৩৪
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৭
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমরা উত্তম উম্মত, যাহাদিগকে
মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হইয়াছে,
তোমরা
নেককাজের আদেশ কর এবং মন্দ কাজ হইতে নিবৃত রাখ এবং আল্লহ তায়া’লার প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা আল-ইমরনঃ ১১০)
قُلْ هَـٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّـهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّـهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামকে সম্বোধণ হইয়াছে,–আপনি বলিয়া দিন, আমার রাস্তা তো ইহাই যে আমি পূর্ণ ইয়াকীনের
সহিত আল্লহ তায়া’লার দিকে দাওয়াত
দেই, এবং যাহারা আমার অনুসারী
তাহারাও (আল্লহ তায়া’লার দিকে দাওয়াত
দেয়।)। (সূরা ইউসুফঃ ১০৮)
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّـهُ ۗ إِنَّ اللَّـهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীগণ হইতেছে পরস্পর একে অন্যের দ্বীনী
সাহায্যকারী, তাহারা নেক
কাজের আদেশ করে এবং তাহারা অসৎ কাজ হইতে বারণ করে এবং যাকাত আদায় করে এবং আল্লহ
তায়া’লার এবং তাঁহার
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের আদেশ মানিয়া চলে, এই সমস্ত
লোকেরাই যাহাদের উপর আল্লহ তায়া’লা অবশ্যই রহমত
বর্ষণ করিবেন, নিঃসন্দেহে
আল্লহ তায়া’লা অতিশয়
ক্ষমতাবান ও হিকমাতওয়ালা। (সূরা তওবাঃ ৭১)
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
আল্লহ তায়া’লার এরশাদ আর
নেকী ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যের সাহায্য কর,
এবং
গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সাহায্য করিও না। (সুরা মায়েদাহঃ ২)
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّـهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ ﴿٣٠﴾ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ﴿٣١﴾ نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ ﴿٣٢﴾ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّـهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿﴾٣٣
সেই ব্যক্তি অপেক্ষা কাহার কথা উত্তম হইতে পারে যে (লোকদিগকে) আল্লহ তায়া’লার দিকে আহবান করে এবং নিজেও নেক আ’মাল করে এবং (আনুগত্য প্রকাশার্থে) বলে যে
আমি অনুগতদের মধ্যে আছি। আর সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান হয় না, (বরং প্রত্যেকটির পরিণতি ভিন্ন) অতএব আপনি
(এবং আপনার অনুসারীগণ) সদ্ব্যাবহার দ্বারা (অসদ্ব্যাবহারের) প্রত্যুত্তর দিন।
(যেমন রাগের উত্তরে সহানশীলতা, কঠোরতা জবাবে
নম্রতা) অনন্তর এই সদ্ব্যাবহারের পরিণতি এই হবে যে, আপনার সহিত যাহার শত্রুতা ছিল সে অকস্মাৎ এমন হইয়া যাইবে
যেমন একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু হইয়া থকে। আর ইহা সহানশীল লোকদেরই নসীব হয় এবং ইহা
মহাভাগ্যবান লোকদেরই ভাগ্যে জোটে। (এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, যে ব্যক্তি আল্লহ তায়া’লার দিকে দাওয়াত দিবে তাহার জন্য সবর
ধৈর্য্য ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া জরুরী) (সূরা হা-মীম সিজদাহঃ ৩০-৩৩)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩১-৭৩৩
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৬
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙ اللَّـهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ قَالُوا مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ ﴿١٦٤﴾ فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ ﴿﴾١٦٥
(বনী ইসরাঈলকে
শনিবার মাছ শিকার করিতে নিষেধ করা হইয়াছিল। কিছু লোক এই হুকুমের উপর আ’মাল করিল, আর কিছু লোক নাফরমানী করিল, এবং কিছু লোক না ফরমানদের উপদেশ দিল। এই আয়াতসমূহে সেই ঘটনা
বর্ণিত হইয়াছে।) আল্লহ তায়া’লার এরশাদ,–আর ঐ সময় স্মরণ করার যোগ্য, যখন বনী ইসরাইলের একদল (যাহারা নাফরমানী
করিত না, আর নাফরমান লোকদেরকে
বাধা দিল, তাহারা ঐ সমস্ত লোকদেরকে
যাহারা উপদেশ দিত,) বলিল, তোমরা এমন লোকদেরকে কেন উপদেশ দিতেছ
যাহাদিগকে আল্লহ তায়া’লা ধ্বংস করিবেন, অথবা কঠোর শাস্তি প্রদান করিবেন। এই কথার
উপর উপদেশ দানকারী দল উত্তর দিল যে,
আমরা
এই জন্য উপদেশ দিতেছি, যেন তোমাদের (ও আমাদের)
রবের নিকট আপন দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিতে পারি। (অর্থাৎ আল্লহ তায়া’লার সামনে ইহা বলিতে পারি যে, হে আল্লহ, আমরা তো বলিয়াছিলাম,
কিন্তু
তাহারা শুনে নাই অতএব আমরা নির্দোষ।) আর এই আশায় যে, হয়ত ইহারা বিরত হইবে (এবং শনিবার দিন শিকার করা ছাড়িয়া
দিবে।) অতঃপর যখন তাহারা এই হুকুম অমান্য করিল, যেই হুকুম সম্পর্কে তাহাদের উপদেশ দেওয়া হইত, তখন আমি সেই সকল লোকদিগকে তো বাঁচাইয়া লইলাম
যাহারা মন্দ কাজ হইতে নিষেধ করিত,
আর
নাফরমানদিগকে তাহাদের সেই নাফরমানীর কারণে যাহা তাহারা করিত এক কঠোর আযাবে
আক্রান্ত করিলাম। (সূরা আ’রাফঃ ১৬৪-১৬৫)
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ ۗ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ ﴿١١٦﴾ وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ ﴿﴾١١٧
যে সকল কওম তোমাদের পূর্বে ধ্বংস হইয়াছে তাহাদের মধ্যে এমন বুদ্ধিমান লোক কেন
হইল না, যাহারা লোকদিগকে দেশে
ফাসাদ বিস্তার করিতে বাধা প্রদান করিত,
তবে
কিছু লোক এমন ছিল যাহারা ফাসাদ হইতে বাধা দিত, যাহাদিগকে আমি আযাব হইতে রক্ষা করিয়াছিলাম। (অর্থাৎ
পূর্ববর্তী উম্মতগণের ধ্বংসের যে ঘটনাবলী বর্ণিত হইয়াছে, উহার কারণ এই ছিল যে, তাহাদের মধ্যে এমন বুদ্ধিমান লোক ছিল না যে, যাহারা তাহাদিগকে আমর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার করিত। সামান্য কিছু
লোক এই কাজ করিতে ছিল, অতএব তাহাদিগকে
আযাব হইতে রক্ষা করা হইয়াছে।) আর যাহারা নাফরমান ছিল, তাহারা যে আরাম আয়েশে ছিল উহার পিছনেই পড়িয়া
রহিল এবং তাহারা অপরাধ পরায়ণ হইয়া গিয়াছিল। আর আপনার রব এমন নহেন যে, তিনি ঐ সকল জনপদসমূহকে যাহার বসবাসকারীগণ
নিজের ও অন্যদের সংশোধনে লাগিয়া রহিয়াছে অন্যায়ভাবে (অকারণে) ধ্বংস ও বরবাদ করিয়া
দিবেন। (সূরা হুদঃ ১১৬-১১৭)
وَالْعَصْرِ ﴿١﴾ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴿٢﴾ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ﴿﴾٣
যামানার কসম, নিশ্চয় মানুষ
অত্যন্ত ক্ষতির মধ্যে রহিয়াছে, কিন্তু যাহারা
ঈমান আনে এবং যাহারা নেককাজের পাবন্দী করে এবং একে অন্যকে হকের উপর কায়েম থাকার ও
একে অন্যকে আ’মালের পাবন্দী
করার তাকীদ করিতে থাকে (তাহারা অবশ্য পরিপূর্ণ ভাবে সফলকাম) (সূরা আসর)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩০-৭৩১
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৫
وَقَالَ الَّذِي آمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُونِ أَهْدِكُمْ سَبِيلَ الرَّشَادِ ﴿٣٨﴾ يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَـٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ ﴿٣٩﴾ مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا ۖ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَـٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿٤٠﴾ وَيَا قَوْمِ مَا لِي أَدْعُوكُمْ إِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُونَنِي إِلَى النَّارِ ﴿٤١﴾ تَدْعُونَنِي لِأَكْفُرَ بِاللَّـهِ وَأُشْرِكَ بِهِ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَأَنَا أَدْعُوكُمْ إِلَى الْعَزِيزِ الْغَفَّارِ ﴿٤٢﴾ لَا جَرَمَ أَنَّمَا تَدْعُونَنِي إِلَيْهِ لَيْسَ لَهُ دَعْوَةٌ فِي الدُّنْيَا وَلَا فِي الْآخِرَةِ وَأَنَّ مَرَدَّنَا إِلَى اللَّـهِ وَأَنَّ الْمُسْرِفِينَ هُمْ أَصْحَابُ النَّارِ ﴿٤٣﴾ فَسَتَذْكُرُونَ مَا أَقُولُ لَكُمْ ۚ وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّـهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ ﴿٤٤﴾ فَوَقَاهُ اللَّـهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا ۖ وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ ﴿﴾٤٥
(ফিরআ’ওন/ফেরাউনের কওম হইতে) সে ব্যক্তি যে, (মূসা আ’লাইহিস সালামের উপর) ঈমান আনিয়াছিল (এবং স্বীয় ঈমানকে গোপন
রাখিয়াছিল) আপন কওমকে বলিল, আমার ভাইয়েরা, তোমরা আমাকে অনুসরণ কর আমি তোমাদিগকে নেকীর
রাস্তা বলিয়া দিব। আমার ভাইয়েরা দুনিয়ার জিন্দেগী অল্প কয়েকদিনের জন্য এবং আর
স্থায়ী নিবাস তো আখেরাতেই হইবে। যে খারাপ কাজ করিবে সে প্রতিফলও সেরূপ পাইবে, আর যে নেক কাজ করিয়াছে, পুরুষ হউক আর মহিলা হউক সে জান্নাতে প্রবেশ
করিবে, যেখানে তাহারা বেহিসাব
রুজী লাভ করিবে। আমার ভাইয়েরা, ইহা কেমন কথা, আমি তোমাদিগকে মুক্তির দিকে দাওয়াত দিতেছি, আর তোমরা আমাকে দোযখের দিকে ডাকিতেছ, তোমরা আমাকে এই কথার প্রতি ডাকিতেছ যে, আমি আল্লহ তায়া’লা কে অস্বীকার করি এবং এমন বস্তুকে তাহার
অংশীদার সাব্যস্ত করি যাহাকে আমি জানিও না। আমি তোমাদিগকে প্রবল পরাক্রান্ত, মহাক্ষমাশীলের দিকে দাওয়াত দিতেছি। আর
সুনিশ্চিত কথা তো এই যে, তোমরা আমাকে যে
বস্তুর দিকে ডাকিতেছ, না উহা দুনিয়াতে
ডাকার যোগ্য না আখেরাতে, আর নিঃসন্দেহে
আমাদের সকলকে আল্লহ তায়া’লার নিকট ফিরিয়া
যাইতে হইবে। আর যাহারা বন্দেগীর সীমা হইতে বাহির হইয়া যাইবে নিঃসন্দেহে তাহারাই
দোযখী হইবে। আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলিতেছি, তোমরা আমার এই কথা আগামীতে যাইয়া স্মরণ করিবে। আর আমি তো
আমার বিষয় আল্লহ তায়া’লার নিকট সোপর্দ
করিতেছি। নিঃসন্দেহে সমস্ত বান্দাগণ আল্লহ তায়া’লার দৃষ্টিতে রহিয়াছে। (পরিণতি এই হইল যে,) আল্লহ তায়া’লা সেই মুমিনকে তাহাদের অনিষ্টকর ষড়যন্ত্র হইতে সুরক্ষিত
রাখিলেন এবং স্বয়ং ফিরআ’ওনীদের উপর
কষ্টদায়ক আযাব নাযিল করিলেন। (সূরা মু’মিনঃ ৩৮-৪৫)
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
(নিজ ছেলেকে হযরত
লুকমানের নসীহাত যাহা আল্লহ তায়া’লা উল্লেখ
করিয়াছেন,) আমার প্রিয় ছেলে, নামায পড়, ভাল কাজের উপদেশ দাও,
খারাপ
কাজ হইতে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে মুসীবাত আসে উহার উপর সবর কর, নিঃসন্দেহে ইহা সাহসিকতার কাজ। (সূরা লুক্বমানঃ
১৭)
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৪
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿٢٣﴾ قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ ﴿٢٤﴾ قَالَ لِمَنْ حَوْلَهُ أَلَا تَسْتَمِعُونَ ﴿٢٥﴾ قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ ﴿٢٦﴾ قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ الَّذِي أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ لَمَجْنُونٌ ﴿٢٧﴾ قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ﴿﴾٢٨
قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَا مُوسَىٰ ﴿٤٩﴾ قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ ﴿٥٠﴾ قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الْأُولَىٰ ﴿٥١﴾ قَالَ عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَابٍ ۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ﴿٥٢﴾ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّن نَّبَاتٍ شَتَّىٰ ﴿﴾٥٣
ফিরআ’ওন (ফেরাউন) বলিল, রব্বুল আ’লামীন কি জিনিস?
মূসা
আ’লাইহিস সালাম বলিলেন, তিনি আসমানসমূহ ও যমীন এবং উহার মধ্যস্থ
সমস্ত বস্তুর প্রতিপালক। যদি তোমাদের বিশ্বাস হয়। ফিরআ’ওন (ফেরাউন) তাহার আশেপাশে উপবিষ্ট লোকদেরকে
বলিল, তোমরা কি শুনিতেছ? (কেমন নিরর্থক কথাবার্তা বলিতেছে? কিন্তু মূসা আ’লাইহিস সালাম আল্লহ তায়া’লার গুণাবলী বর্ণনা জারি রাখিলেন এবং)
বলিলেন, তিনিই তোমাদের এবং
তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষগণের প্রতিপালক। ফিরআ’ওন নিজ লোকদের বলিতে লাগিল, তোমাদের এই রসূল যিনি তোমাদের প্রতি প্রেরিত হইয়াছেন, নিঃসন্দেহে পাগল। মূসা আ’লাইহিস সালাম বলিলেন, তিনিই পূর্ব পশ্চিমের প্রতিপালক এবং উহার
মধ্যস্থিত সকল বস্তুরও। যদি তোমরা কিছু জ্ঞান বুদ্ধি রাখ। (সূরা শুআ’রাঃ ২৩-২৮)
অন্য এক জায়গায় আল্লহ তায়া’লা মূসা আ’লাইহিস সালামের দাওয়াত এইভাবে বর্ণনা
করিয়াছেন– ফিরআ’ওন বলিল, (ইহা বল,) তোমাদের উভয়ের
প্রতি পালক কে? মূসা আ’লাইহিস সালাম উত্তর দিলেন, আমাদের উভয়ের (বরং সকলের) প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে উহার যথাযথ আকৃতি দান
করিয়াছেন, (অতঃপর সমস্ত
সৃষ্টিকে সর্বপ্রকার কল্যাণ হাসিল করার) বুঝ জ্ঞান দান করিয়াছেন। (ফিরআ’ওন মূসা আ’লাইহিস সালামের যুক্তি সঙ্গত উত্তর শুনিয়া অনর্থক প্রশ্ন
করিতে আরম্ভ করিল এবং) বলিল, আচ্ছা, পূর্ববর্তী লোকদের অবস্থা বর্ণনা করুন। মূসা
আ’লাইহিস সালাম বলিলেন, তাহাদের সম্পর্কিত জ্ঞান আমার রবের নিকট
লওহে মাহফুযে রহিয়াছে। আমার রব (এরূপ সর্বজ্ঞ যে,) বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলিয়াও যান না। (তাহাদের আ’মাল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আমার রবের রহিয়াছে।
অতঃপর হযরত মূসা আ’লাইহিস সালাম
আল্লহ তায়া’লার এমন ব্যাপক
গুণাবলী বর্ণনা করিলেন যাহা সাধারণ মানুষও বুঝিতে পারে। সুতরাং তিনি বলিলেন,) তিনি এমন রব যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে
বিছানা স্বরূপ বানাইয়াছেন এবং উহাতে তোমাদের জন্য রাস্তাসমূহ বানাইয়াছেন। আর আসমান
হইতে পানি বর্ষণ করিয়াছেন। (সুরা ত্বহাঃ ৪৯-৫৩)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّـهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
আমি মূসা আ’লাইহিস সালাম কে
এই আদেশ দিয়া পাঠাইয়াছি যে, আপন কওমকে
(কুফরের) অন্ধকার হইতে (ঈমানের) আলোর দিকে আনয়ন কর এবং আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে তাহারা যে সকল মুসীবাত ও
নিয়ামাতের ঘটনাবলীর সম্মুখীন হয় সে সকল ঘটনাবলী তাহাদিগকে স্মরণ করাও। কেননা এই
সমস্ত ঘটনাবলীর মধ্যে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও শোকরগুজার বড় নিদর্শনসমূহ রহিয়াছে।
(সূরা ইবরহীমঃ ৫)
أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ
(নূহ আ’লাইহিস সালাম আপন কওমকে বলিলেন,) আমি তোমাদিগকে আপন রবের পয়গামসমূহ
পৌঁছাইতেছি এবং আমি তোমাদের সত্যিকার হিতাকাঙ্খী (সূরা আ’রাফঃ ৬৮)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭২৬-৭২৮
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-৩
إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿١﴾ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ﴿٢﴾ أَنِ اعْبُدُوا اللَّـهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ﴿٣﴾ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ أَجَلَ اللَّـهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ ۖ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٤﴾ قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا ﴿٥﴾ فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَائِي إِلَّا فِرَارًا ﴿٦﴾ وَإِنِّي كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوا أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَأَصَرُّوا وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا ﴿٧﴾ ثُمَّ إِنِّي أَعْلَنتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا ﴿٩﴾ فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴿١٠﴾يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا ﴿١١﴾ وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا ﴿١٢﴾ مَّا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّـهِ وَقَارًا ﴿١٣﴾ وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا ﴿١٤﴾ أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّـهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ﴿١٥﴾ وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا ﴿١٦﴾ وَاللَّـهُ أَنبَتَكُم مِّنَ الْأَرْضِ نَبَاتًا ﴿١٧﴾ ثُمَّ يُعِيدُكُمْ فِيهَا وَيُخْرِجُكُمْ إِخْرَاجًا ﴿١٨﴾ وَاللَّـهُ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ بِسَاطًا ﴿١٩﴾ لِّتَسْلُكُوا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا ﴿﴾٢٠
নিশ্চয়ই আমি নূহ (আ’লাইহিস সালাম)
কে তাঁহার কওমের প্রতি এই হুকুম দিয়া পাঠাইয়াছিলাম যে, স্বীয় কওমকে ভয় প্রদর্শন করুন, ইহার পূর্বে যে, তাহাদের প্রতি যন্ত্রণাময় আযাব আসিয়া পড়ে।
অতএব তিনি আপন কওমকে বলিলেন, হে আমার কওম, আমি তোমাদেরকে স্পষ্টরূপে নসীহাত করিতেছি যে, তোমরা আল্লহ তায়া’লার ইবাদাত কর এবং তাহাকে ভয় করিতে থাক এবং
আমার কথা মান, (এইরূপ করিলে)
আল্লহ তায়া’লা তোমাদের
গুনাহসমূহ মাফ করিয়া দিবেন এবং মৃত্যুর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আযাবকে পিছাইয়া
দিবেন–অর্থাৎ দুনিয়াতেও আযাব
হইতে রক্ষা করিবেন আর আখেরাতে আযাব না হওয়া তো সুস্পষ্ট। আল্লহ তায়া’লার নির্ধারিত সময় যখন আসিয়া পড়ে, তখন উহাকে আর পিছনে হঠানো যায় না–অর্থাৎ ঈমান ও তাকওয়ার বরকতে আযাব হইতে তো
রক্ষা হইয়া যাইবে, কিন্তু মৃত্যু
অবশ্যই আসিবে, যদি তোমরা ইহা
বুঝিতে। (যখন দীর্ঘদিন পর্যন্ত কওমের উপর এই সকল কথার কোন আছর হইল না, তখন) নূহ (আ’লাইহিস সালাম) দোয়া করিলেন, আমার রব, আমি আমার কওমকে
রাত্রি দিন দাওয়াত দিয়াছি। কিন্তু আমার দাওয়াতের দরুন তাহারা দ্বীন হইতে আরও দূরে
সরিয়া যাইতেছে। আর আমি যখনই তাহাদের ঈমানের দাওয়াত দিতাম, যেন তাহাদের ঈমানের কারণে আপনি তাহাদিগকে
ক্ষমা করিয়া দেন তখনই তাহারা নিজ নিজ কর্ণসমূহে স্বস্ব আঙ্গুল ঢুকাইয়া লইত এবং
তাহাদের বস্ত্রসমূহ নিজেদের উপর জড়াইয়া লইত,
(যেন
তাহারা আমাকে দেখিতে না পায় এবং আমি তাহাদিগকে দেখিতে না পাই।) আর তাহারা
(অন্যায়ের উপর) হটকারিতা করিল এবং সীমাহীন অহংকার করিল। তারপর (ও আমি তাহাদিগকে
বিভিন্ন উপায়ে নসীহাত করিতে রহিয়াছি,
সুতরাং)
আমি তাহাদিগকে উচ্চস্বরে দাওয়াত দিয়াছি। অতঃপর আনি তাহাদিগকে প্রকাশ্যেও বুঝাইয়াছি
এবং গোপনেও বুঝাইয়াছি–অর্থাৎ তাহাদের
হিদায়াতের যে কোন উপায় হইতে পারে কোনটাই ছাড়ি নাই। প্রকাশ্য জনসমক্ষে আমি
তাহাদিগকে দাওয়াত দিয়াছি আবার বিশেষভাবে তাহাদের ঘরে ঘরে যাইয়াও প্রকাশ্যে
বিস্তারিত ভাবে বলিয়াছি। এবং গোপনে চুপি চুপি তাহাদিগকে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত
করিয়াছি। আর (এই বুঝাইতে যাইয়া) আমি তাহাদিগকে বলিয়াছি যে, তোমরা আপন রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিঃসন্দেহে তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। এই ক্ষমা
প্রার্থনার ফলে তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করিবেন। এবং তোমাদের মাল
আওলাদে বরকত দান করিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগানসমূহ লাগাইয়া দিবেন এবং তোমাদের
জন্য নহরসমূহ প্রবাহিত করিয়া দিবনে। তোমাদের কি হইল যে, আল্লহ তায়া’লার মহত্ত্বের খেয়াল রাখিতেছ না? অথচ তিনি তোমাদিগকে বিভিন্ন ধাপে সৃষ্টি
করিয়াছেন। তোমাদের কি জানা নাই যে,
আল্লহ
তায়া’লা সাত আসমানকে কিরূপে
স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন? আর সেই সমানে
চন্দ্রকে জ্যোতিময় বানাইয়াছেন। আর আল্লহ তায়া’লা তোমাদিগকে (মৃত্যুর পর) যমীনেই ফিরাইয়া নিবেন এবং
(কিয়ামাতে) এই যমীন হইতেই তোমাদিগকে বাহিরে আনয়ন করিবেন। আর আল্লহ তায়া’লাই যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা বানাইয়াছেন, যেন তোমরা উহার প্রশস্ত পথসমূহে চলাফেরা কর–অর্থাৎ যমীনে চলাফেরা করিতে পথের কোন বাধা
নাই। (সূরা নূহ: ১-২০)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব ) পৃষ্ঠা ৭২৪-৭২৬
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-২
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
আর বুঝাইতে থাকুন, কেননা বুঝানো
ঈমানদারগণকে সুফল প্রদান করে। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৫)
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿١﴾قُمْ فَأَنذِرْ ﴿٢﴾وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿﴾٣
আল্লহ তায়া’লা আপন
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম কে বলিতেছেন–হে বস্ত্রাবৃত!
উঠুন, অতঃপর ভীতি প্রদর্শন
করুন এবং আপন রবের বড়ত্ব বর্ণনা করুন (সূরা মুদ্দাস্সিরঃ ১-৩)
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম কে সম্বোধন করিয়া আল্লহ তায়া’লা এরশাদ
করিতেছেন–মনে হয় আপনি ইহাদের ঈমান
না আনার কারণে চিন্তায় চিন্তায় নিজের জীবন দিয়া দিবেন, (সূরা শু’আরাঃ ৩)
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
নিঃসন্দেহে তোমাদের নিকট এমন একজন রসূল আগমন করিয়াছে, যিনি তোমাদের মধ্য হইতেই একজন, যাঁহার নিকট তোমাদের কোন কষ্টকর বিষয় অতি
দুর্বহ মনে হয়, তিনি তোমাদের
অতিশয় হিতাকাঙ্খী (তাঁহার এই অবস্থা তো সকলের জন্য) বিশেষ করিয়া মুমিনদের প্রতি
বড়ই স্নেহশীল, করুণাপরায়ণ।
(সূরা তওবাহঃ ১২৮)
فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ
আল্লহ তায়া’লা রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের প্রতি এরশাদ করিয়াছেন–থাদের ঈমান না আনার
দরুন, অনুতাপ করিতে করিতে
প্রাণ না বাহির হইয়া যায়। (সূরা ফাতিরঃ ৮)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব ) পৃষ্ঠা ৭২৩-৭২৪
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ-১
وَاللَّـهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
এবং আল্লহ তায়া’লা শান্তির ঘর–অর্থাৎ জান্নাতের দিকে দাওয়াত দেন, এবং তিনি যাহাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখান। (সূরা
ইউনুসঃ ২৫)
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
আল্লহ তায়া’লা তিনি, যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে তাহাদেরই মধ্য হইতে
একজন রসূল প্রেরণ করিয়াছেন,–অর্থাৎ সেই রসূল
উম্মী ও নিরক্ষর–যিনি তাহাদিগকে
আল্লহ তায়া’লার আয়াতসমূহ
পড়িয়া শুনান,–অর্থাৎ কুরআন
কারীমের দ্বারা তাহাদিগকে দাওয়াত দেন,
নসীহাত
করেন এবং তাহাদিগকে ঈমান আনয়নের জন্য উৎসাহিত করেন, (যদ্দ্বারা তাহারা হিদায়াত লাভ করে) এবং তাহাদের চরিত্র
সংশোধন ও সুন্দর করেন। তাহাদিগকে কুরআন পাক শিক্ষা দেন এবং সুন্নাত ও সঠিক জ্ঞান
বুঝ শিক্ষা দেন, আর নিঃসন্দেহে
ইহারা এই রসূল প্রেরণের পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল (সূরা জুমুআহঃ ২)
وَلَوْ شِئْنَا لَبَعَثْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ نَّذِيرًا ﴿٥١﴾ فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُم بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا ﴿﴾٥٢
যদি আমরা (আরবীতে সম্মান বুঝাতে এক বচন কর্তার ক্ষেত্রে বহু বচন ব্যবহার করা
হয়) চাহিতাম তবে (এই যুগেই আপনি ব্যতীত) প্রত্যেক বস্তিতে একজন করিয়া পয়গম্বর
প্রেরণ করিতাম (এবং একা আপনার উপর সমস্ত দায়িত্ব অর্পন করিতাম না, কিন্তু যেহেতু আপনার সওয়াব বৃদ্ধি করা
উদ্দেশ্য সেহেতু এরূপ করি নাই। এইভাবে একা আপনার উপর সমস্ত কাজের ভার দেওয়া আল্লহ
তায়া’লার নিয়ামাত। অতেন এই
নিয়ামাতের শুকরিয়া হিসাবে) আপনি কাফেরদের আনন্দদায়ক কাজ করিবেন না,–অর্থাৎ কাফেররা তো আপনি তাবলীগ না করিলে বা
কম করিলে আনন্দিত হইবে; আর কুরআন (এ
হকের পক্ষে যেসকল দলীল প্রমাণ রহিয়াছে উহা) দ্বারা কাফেরদের জোরেশোরে মুকাবিলা করুন, সকলকে বলুন এবং বারবার বলুন, আর হিম্মতকে মজবুত রাখুন। (সূরা ফুরক্বনঃ
৫১-৫২)
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
আল্লহ তায়া’লা আপন
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম কে সম্বোধন করিয়া এরশাদ করিয়াছেন,–আপনি আপনার রবের
পথের দিকে দাওয়াত দিন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশসমূহের দ্বারা। (সূরা নাহ্লঃ
১২৫)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব ) পৃষ্ঠা ৭২২-৭২৩
No comments:
Post a Comment