দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত)
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২৪
হযরত হুযাইফাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (حذيْفة رضى الله عنْه) হইতে বর্ণিত আছে যে,
রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, মানুষের স্ত্রী, মাল,
আওলাদ
এবং প্রতিবেশী সম্পর্কিত হুকুম পালনে যে ত্রুটি বিচ্যুতি ও গুনাহ হয়, নামায সদকা আমর বিল মা’রুফ অ নাহী আনিল মুনকার উহার কাফফারা হইয়া
যায়। (বুখারী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৫১
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২৩
হযরত ইবনে আ’ব্বাস রদিয়াল্লহু
আ’নহুমা (ابْن عبّاس رضى الله عنْهما) বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সেই ব্যক্তি আমাদের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত
নহে, যে আমাদের ছোটদের প্রতি
দয়া করে না, আমাদের বড়দের
সম্মান করে না, সৎকাজের আদেশ
করেনা এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে না। (তিরমিযী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৫১
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২২
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ سعيْد رضى الله عنْه)
বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা রাস্তার উপরে
বসিও না। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! আমাদের জন্য রাস্তার উপরে না
বসিয়া উপায় নাই, আমরা সেখানে
বসিয়া কথাবার্তা বলিয়া থাকি। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন, যদি বসিতেই হয় তবে রাস্তার হকসমূহ আদায়
করিবে। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! রাস্তার হকসমূহ কি? তিনি এরশাদ করিলেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা হইতে সরাইয়া দেওয়া, (অথবা স্বয়ং কাহাকেও কষ্ট না দেওয়া) সালামের
উত্তর দেওয়া, সৎ কাজে আদেশ
করা অসৎ কাজের নিষেধ করা। (বুখারী)
ফায়দাঃ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের
উদ্দেশ্য ছিল রাস্তায় বসা হইতে বাঁচিয়া থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা আমাদের এমন কোন স্থান নাই যেখানে আমরা
মজলিস করিতে পারি। এইজন্য যখন আমরা কয়েকজন একত্রিত হই তখন সেখানে রাস্তার উপরেই
বসিয়া যাই এবং নিজেদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী বিষয়ে পরস্পর পরমর্শ করি। একে অন্যের
অবস্থা জিজ্ঞাসা করি। কেহ অসুস্থ হইলে তাহার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করি পরস্পর
কোন মনোকষ্ট থাকিলে উহা দূর করিয়া আপো্ষ করি।
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৫০-৭৫১
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২১
হযরত আবু উমাইয়্যাহ শা’বানী রহমাতুল্লহ
আ’লাইহি বলেন, আমি হযরত আবু সা’লাবাহ খুশানী রদিয়াল্লহু আ’নহু (ابىْ ثعْلبة الْخشنيّ رضى الله عنْه)
কে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি আল্লহ তায়া’লার এই এরশাদ لَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ‘তোমরা তোমাদের
নিজেদের ফিকির কর’ এই ব্যাপারে কি
বলেন। তিনি বলিলেন, আল্লহর কসম, তুমি এমন ব্যক্তির কাছে এই বিষয় জিজ্ঞাসা
করিয়াছ, যে এই ব্যাপারে খুব
ভালভাবে অবগত আছে। আমি স্বয়ং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আয়াতের অর্থ
জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলাম। তিনি এরশাদ কইয়াছিলেন যে, (ইহার অর্থ এই নহে যে শুধু নিজের ফিকির কর) বরং একে অন্যকে
সৎ কাজের আদেশ করিতে থাক এবং অসৎ কাজ হইতে বাধা দিতে থাক। অতঃপর যখন দেখিবে যে, লোকেরা ব্যাপক ভাবে কৃপণতা করিতেছে, খাহেশাতকে পূরণ করা হইতেছে দুনিয়াকে দ্বীনের
উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হইতেছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের রায়কে পছন্দ করিতেছে
(অন্যের রায়কে মানিতেছে না) তখন সাধারণ লোকদের ছাড়িয়া দিয়া নিজের সংশোধনে লাগিয়া
যাইও। কেননা শেষ যামানায় এমন দিন আসিবে যখন দ্বীনের হুকুমসমূহের উপর অটল থাকিয়া আ’মাল করা জ্বলন্ত কয়লা হাতে লওয়ার ন্যায় কঠিন
হইবে। সেই সময়ে আ’মালকারী তাহার
একটি আ’মালের উপর এত পরিমাণ
সওয়াব পাইবে, যত পরিমাণ
পঞ্চাশজন উক্ত আ’মাল করিলে পায়।
হযরত আবু সা’লাবাহ
রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি আরজ করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! তাহাদের মধ্য হইতে পঞ্চাশ
জনের সওয়াব পাইবে (না আমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের)? (কেননা সাহাবীদের আ’মালের সওয়াব অনেক বেশী) এরশাদ করিলেন, তোমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের সওয়াব সেই
একজন পাইবে। (আবু দাউদ)
ফায়দাঃ ইহার অর্থ এই নহে যে,
শেষ
যামানায় আ’মালকারী ব্যক্তি তাহার
এই বিশেষ ফযীলতের কারণে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের অপেক্ষা মর্যাদায় বাড়িয়া যাইবে। কেননা সাহাবাহ
রদিয়াল্লহু আ’নহুম
সর্বাবস্থায় সমস্ত উম্মত হইতে উত্তম।
এই হাদীস শরীফ দ্বারা জানা গেল যে,
আ’মর বিল ম’রুফ নাহী আনিল মুনকার করিতে থাকা জরুরী। অবশ্য যদি হক কথা
গ্রহণ করার যোগ্যতা একেবারেই খতম হইয়া যায় তবে সেই সময়ে পৃথক থাকার হুকুম রহিয়াছে।
আল্লহ তায়া’লা মেহেরবাণীতে
এখনও সেই সময় উপস্থিত হয় নাই, কেননা এখনও
উম্মতের মধ্যে হক কথা কবুল করার যোগ্যতা বিদ্যমান রহিয়াছে।
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব,) পৃষ্ঠা
৭৪৯-৭৫০
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২০
হযরত হুযাইফাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (حذيْفة رضى الله عنْه)
বলেন, আমি রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে,
মানুষের
দিলের উপর আগে পিছে এমন ভাবে ফিতনাসমূহ আসিবে যেমন চাটাইয়ের চটাগুলি আগে পিছে একটা
অপরটার সহিত জড়িত থাকে। অতএব যে দিল এই সকল ফিতনা হইতে একটিকে গ্রহণ করিবে সে দিলে
একটি কালো দাগ লাগিয়া যাইবে। আর যে দিল উহা গ্রহণ করিবে না সে দিলে একটি সাদা
চিহ্ন লাগিয়া যাইবে। অবশেষে দিল দুই প্রকার হইয়া যাইবে। একটি সাদা মর্মর পাথরের
ন্যায়,–যতদিন আসমান যমীন কায়েম
থাকিবে কোন ফেতনা উহার ক্ষতি করিতে পারিবে না। (অর্থাৎ মর্মর পাথর মসৃণ হওয়ার
কারণে যেমন উহার উপর কোন জিনিস স্থির থাকিতে পারে না তেমনি ঈমান মজবুত হওয়ার কারণে
তাহার দিলের উপর ফেতনা কোন প্রভাব ফেলিতে পারিবে না।) দ্বিতীয় প্রকার দিল, কালো ছাই রঙের উপুর করা পেয়ালার ন্যায় হইবে।
অর্থাৎ অধিক গুনাহের কারণে দিল কালো হইয়া যাইবে। যেমন উপুড় করা পেয়ালার মধ্যে কোন
জিনিস থাকে না তেমনি এই দিলের মধ্যে গুনাহের প্রতি ঘৃণা ও ঈমানের কোন নূর অবশিষ্ট
থাকিবে না। যে কারণে সে না নেকীকে নেকী,
না
গুনাহকে গুনাহ বুঝিবে। শুধু নিজের খায়েশের উপর আ’মাল করিবে,
যাহা
তাহার দিলের ভিতরে জমিয়া থাকিবে। (মুসলিম)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৪৮
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৯
হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ بكر رضى الله عنْه)
বলিয়াছেন, লোকেরা, তোমরা এই আয়াত পড়িয়া থাক
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى اللَّـهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, নিজেদের ফিকির কর, যখন তোমরা সোজা পথে চলিতেছ তখন যে ব্যক্তি
পথভ্রষ্ট হয় তাহার দ্বারা তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। (সূরা মায়েদাহঃ ১০৫)
আর আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে,
যখন
লোকেরা জালেমকে জুলুম করিতে দেখিয়াও তাহাকে জুলুম হইতে বাধা দিবে না, তখন অতিসত্ত্বর আল্লহ তায়া’লা তাহাদের সকলকে স্বীয় ব্যাপক আযাবে লিপ্ত
করিয়া দিবেন (তিরমিযী)
ফায়দাঃ হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর উদ্দেশ্য
এই ছিল যে, তোমরা আয়াতের
মর্ম এই বুঝ যে, যখন মানুষ নিজে
হিদায়াতের উপর রহিয়াছে তখন তাহার জন্য আ’মর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার করা জরুরী নহে, কারণ অন্যদের ব্যাপারে তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হইবে না। হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু হাদীস
বর্ণনা করিয়া আয়াতের এই ভুল অর্থকে নাকচ করিলেন। যাহা দ্বারা ইহা পরিষ্কার হইয়া
গেল যে, যথাসম্ভব অন্যায় কাজ
হইতে বাধা দেওয়া এই উম্মতের দায়িত্ব এবং প্রত্যেক ব্যাক্তির কাজ। আয়াতের সঠিক অর্থ
এই যে, হে ঈমানদারগণ, নিজের সংশোধনের ফিকির কর। তোমাদের দ্বীনের
রাস্তায় চলা এইভাবে হউক যে, নিজেরাও সংশোধন
করিতেছ আবার অন্যদেরও সংশোধনের ফিকির করিতেছ। তারপর যদি কেহ গোমরাহ হইয়া যায়
তবেতাহার গোমরাহ হওয়ার দ্বারা তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। (বয়ানুল কুরআন)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৪৭-৭৪৮
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৮
হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে
মাসঊ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (عبْد الله بنْ مسْعوْد رضى الله عنْه)
হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্ব প্রথম অধঃপতন
এইভাবে আরম্ভ হইল যে, একজন যখন
অপরজনের সহিত সাক্ষাত করিত এবং তাহাকে বলিত,
হে
অমুক, আল্লহ তায়া’লাকে ভয় কর, তুমি যে কাজ করিতেছ তাহা ছাড়িয়া দাও, কেননা উহা তোমার জন্য জায়েজ নাই। অতঃপর
দ্বিতীয় দিন যখন তাহার সহিত সাক্ষাত হইত তখন তাহার না মানা সত্ত্বেও সেই ব্যক্তির
সহিত নিজের সম্পর্কের দরুন তাহার সহিত খানাপিনা উঠাবসা পূর্বের মতই করিত। যখন
ব্যাপকভাবে এইরূপ হইতে লাগিল এবং আ’মর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার করা ছাড়িয়া দিল তখন
আল্লহ তায়া’লা ফরমাবরদারদের
দিল নাফরমানদের ন্যায় কঠিন করিয়া দিলেন। অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিচের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত
করিলেন,
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ ﴿٧٨﴾كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ﴿٧٩﴾ تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّـهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ﴿٨٠﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَـٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿﴾٨١
(প্রথম দুই
আয়াতের তরজমা এই) বনী ইসারাঈলের উপর হযরত দাউদ ও হযরত ঈ’সা আলাইহিমাস সালামের যবানে লা’নত করা হইয়াছে। ইহা এই কারণে যে, তাহারা নাফরমানী করিত এবং সীমা অতিক্রম
করিত। যে অন্যায় কাজে তাহারা লিপ্ত ছিল উহা হইতে তাহারা একে অপরকে নিষেধ করিত না।
প্রকৃতই তাহাদের এই কাজ মন্দ ছিল। (সূরা মায়েদাহঃ ৭৮-৮১)
অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম অত্যন্ত তাকীদের সহিত এই হুকুম করিয়াছেন যে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান কর, জালেমকে জুলুম হইতে বিরত রাখিতে থাক এবং
তাহাকে হক কথার দিকে টানিয়া আনিতে থাক আর তাহাকে হকের উপর ধরিয়া রাখ। (আবু দাউদ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব) পৃষ্ঠা ৭৪৬-৭৪৭
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৭
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ سعيْد رضى الله عنْه)
বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমাদের মধ্যে
কেহ নিজেকে হেয় মনে না করে। সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন,
নিজেকে
হেয় মনে করার কি অর্থ? এরশাদ করিলেন,
এমন
কোন বিষয় দেখে যাহার ব্যাপারে আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে
তাহার উপর সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে,
কিন্তু
সে উক্ত বিষয়ে কিছুই বলে না। আল্লহ তায়া’লা কিয়ামাতের
দিন তাহাকে বলিলেন, কি জিনিস তোমাকে
ওমুক ওমুক বিষয়ে কথা বলিতে বাধা দিয়াছিল?
সে
আরজ করিবে মানুষের ভয়ে বলি নাই যে,
তাহারা
আমাকে কষ্ট দিবে। আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করিবেন, আমি ইহার বেশী উপযুক্ত ছিলাম যে, তুমি আমাকে ভয় করিতে। (ইবনে মাজাহ)
ফায়দাঃ আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে
অসৎ কাজে নিষেধ করার যে দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে মানুষের ভয়ে সে দায়িত্ব পালন না করা
হইল নিজেকে হেয় মনে করা।
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব,) পৃষ্ঠা
৭৪৫-৭৪৬
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৬
হযরত জারীর রদিয়াল্লহু আ’নহু (جريْر رضى الله عنْه)
বলেন, একবার আমি রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের কাছে অভিযোগ করিলাম যে,
আমি
ভালভাবে ঘোড়ায় সওয়ার হইতে পারি না। তিনি আমার বুকের উপর হাত মারিয়া দোয়া করিলেন, হে আল্লহ, ইহাকে ভাল ঘোড়সওয়ার বানাইয়া দিন এবং নিজে সরল পথে চলিয়া
অন্যদেরও সরল পথ প্রদর্শনকারী বানাইয়া দিন। (বুখারী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪৫
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৫
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (سهْل بْنن سعْد رضى الله عنْه)
বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, এই কল্যাণ অর্থাৎ দ্বীন ভান্ডার। অর্থাৎ
দ্বীনের উপর আ’মাল করা আল্লহ
তায়া’লার অফুরন্ত নিয়ামাতের
ভান্ডার হইতে উপকৃত হওয়ার উপায় এই সমস্ত ভান্ডারের জন্য চাবি রহিয়াছে। সুসংবাদ সেই
বান্দার জন্য যাহাকে আল্লহ তায়া’লা কল্যাণের
চাবি (ও) অকল্যাণের তালা বানাইয়া দেন। অর্থাৎ–যাহাকে হিদায়াতের উসিলা বানাইয়া দেন। আর ধ্বংস সেই বান্দার
জন্য যাহাকে আল্লহ তায়া’লা অকল্যাণের
চাবি (ও) কল্যাণের তালা বানাইয়া দেন। অর্থাৎ–যে গোমরাহীর
উসিলা হয়। (ইবনে মাজাহ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪৪
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৪
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আ’নহু (أنسْ رضى الله عنْه)
বলেন, এক ইয়াহুদী ছেলে
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের খেদমত করিত। সে অসুস্থ হইলে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাকে দেখিতে গেলেন।
তিনি তাহার মাথার নিকট বসিলেন এবং বলিলেন,
মুসলমান
হইয়া যাও। সে তাহার পিতার দিকে দেখিল। পিতা সেখানেই উপস্থিত ছিল। পিতা বলিল, আবুল কাসেম (রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা মানিয়া লও। অতএব
সে ছেলে মুসলমান হইয়া গেল। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাহির হইয়া আসিলেন তখন বলিতেছিলেন, সমস্ত প্রসংশা আল্লহ তায়া’লার জন্য, যিনি এই ছেলেকে জাহান্নামের আগুন হইতে বাঁচাইয়া লইলেন। (বুখারী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪৪
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১৩
হযরত যায়নাব বিনতে জাহ’শ রদিয়াল্লহু আ’নহা (زيْنب بنْت جحْش رضى الله عنْها)
বলেন, আমি রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ!
আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হইয়া যাইব? তিনি এরশাদ করিলেন, জ্বি হ্যাঁ যখন অসৎ কাজ ব্যাপক হইয়া যাইবে।
(বুখারী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪৩
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১২
হযরত হু’যাইফাহ ইবনুল
ইয়ামান রদিয়াল্লহু আ’নহু (حذيْفة بْن الْيمان رضى الله عنْه)
বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সে যাতের কসম, যাহার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই আমর বিল মা’রুফ, নাহী আনিল
মুনকার করিতে থাক (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ) করিতে থাক। নতুবা অতি সত্ত্বর
আল্লহ তায়া’লা তোমাদের উপর আপন
আযাব পাঠাইয়া দিবেন। অতঃপর তোমরা দোয়া করিলেও আল্লহ তায়া’লা তোমাদের দোয়া কবুল করিবেন না। (তিরমিযী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪৩
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১১
হযরত আবু বাকরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (ابىْ بكْرة رضى الله عنْه)
হইত বর্ণিত আছে, রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম (হজ্জের সময় ১০ই জিলহজ্জ মিনাতে খুতবার শেষে) এরশাদ করিয়াছেন, আমি তোমাদিগকে আল্লহ তায়া’লার পয়গাম পৌঁছাইয়া দিয়াছি? (সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম বলেন,) আমরা আরজ করিলাম ,
জ্বি
হ্যাঁ। আপনি পৌঁছাইয়া দিয়াছেন। তিনি এরশাদ করিলেন, সে আল্লহ! আপনি ইহাদের স্বীকারোক্তির উপর সাক্ষী হইয়া যান।
অতঃপর তিনি এরশাদ করিলেন, যাহারা এখানে
উপস্থিত আছে তাহারা ঐ সমস্ত নিকট পৌঁছাইবে যাহারা এইখানে উপস্থিত নাই। কারণ, অনেক সময় দ্বীনের কথা যাহাকে পৌঁছানো হয় সে, যে পৌঁছাইয়া দেয় তাহার অপেক্ষা বেশী স্মরণ
রাখিতে সক্ষম হয়। (বুখারী)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪২-৭৪৩
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১০
হযরত উ’রস ইবনে আ’মীরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (الْعرْس بْن عميْرة رضى الله عنْه)
বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, আল্লহ তায়া’লা কিছু লোকদের ভুলের উপর সকলকে (যাহারা সেই ভুলে লিপ্ত
নহে) আযাব দেন না, আবশ্য ঐ অবস্থায়
সকলকে আযাব দেন যখন হুকুম পালনকারীগএবং শক্তি থাকা সত্ত্বেও অমান্যকারী দিগকে বাধা
না দেয়। (তাবারানী, মাজমায়ে
যাওয়ায়েদ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪২
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৯
হযরত নু’মান ইবনে বশীর
রদিয়াল্লহু আ’নহু (النّعْمان بْن بشيْر رضى الله عنْه)
বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সেই ব্যক্তি যে আল্লহ তায়া’লার হুকুম পালন করে আর সেই ব্যক্তি যে আল্লহ
তায়া’লার হুকুম অমান্য করে–ইহাদের উভয়ের উদাহরণ ঐ সমস্ত লোকদের ন্যায়
যাহারা একটি বড় জাহাজে আরোহণ করিয়াছে। লটারীর মাধ্যমে জাহাজের তলা নির্ধারণ করা
হইয়াছে। সুতরাং কিছু লোক জাহাজের উপর তলায় এবং কিছু লোক জাহাজের নিচ তলায় অবস্থান
করিয়াছে। নিচের তলার লোকদের যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন তাহারা উপরে আসে এবং উপরতলায়
উপবেশনকারীদের নিকট দিয়া অতিক্রম করে।
তাহারা ভাবিল যদি আমরা আমাদের (নিচের) অংশে ছিদ্র করিয়া লই (যাহাতে উপরে
যাওয়ার পরিবর্তে ছিদ্র হইতেই পানি লইয়া লইব) এবং আমরা উপরের লোকদের কষ্ট না দেই
(তবে কতই না উত্তম হয়)। এমতাবস্থায় যদি
উপরওয়ালারা নিচের লোকদিগকে তাহাদের অবস্থার উপর ছাড়িয়া দেয় এবং তাহাদিগকে তাহাদের
এই সিদ্ধান্ত হইতে বিরত না রাখে (আর তাহারা ছিদ্র করিয়া ফেলে) তবে সকলেই ধ্বংস
হইয়া যাইবে। আর যদি তাহারা তাহাদের হাত ধরিয়া ফেলে (যে, ছিদ্র করিতে দিব না) তবে তাহারা নিজেরাও
বাঁচিবে এবং অন্যান্য মুসাফিরগণও বাঁচিয়া যাইবে। (বুখারী)
ফায়দাঃ এই হাদীসে দুনিয়ার দৃষ্টান্ত একটি জাহাজের সহিত দেওয়া হইয়াছে, যাহাতে আরোহীগণ একে অন্যের ভুলের দ্বারা
প্রভাবিত না হইয়া পারে না। সমস্ত দুনিয়ার মানুষ এক কওমের ন্যায় একই জাহাজের আরোহী।
এই জাহাজে হুকুম পালনকারীও রহিয়াছে। হুকুম অমান্যকারীও রহিয়াছে। যদি অবাধ্যতা
ব্যাপক হইয়া যায় তবে শুধু সেই শ্রেণিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না যাহারা হুকুম অমান্য
করিতেছে বরং সমস্ত কওম ও সমস্ত দুনিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হইবে। অতএব মানবসমাজকে ধ্বংসের
হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাহাদিগকে আল্লহ তায়া’লার অবাধ্যতা হইতে বিরত রাখা একান্ত জরুরী। যদি এরূপ না করা
হয়, তবে সমস্ত মানবসমাজ
আল্লহ তায়া’লার আযাবে
গ্রেফতার হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে।
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪১-৭৪২
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৮
হযরত আবু সাঈ’দ খুদরী
রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبى سعيْدٍ الْخدْرىّ رضى الله عنْه) হইতে বর্ণিত আছে যে, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে
শুনিয়াছি যে, তোমাদের মধ্যে
যে কেহ কোন খারাপ কাজ হইতে দেখে তাহার উচিত উহাকে নিজের হাত দ্বারা পরিবর্তন করিয়া
দেয়। যদি (হাত দ্বারা পরিবর্তন করার) শক্তি না থাকে তবে যবান দ্বারা উহাকে
পরিবর্তন করিয়া দিবে। আর যদি এই শক্তিও না থাকে তবে অন্তর দ্বারা উহাকে খারাপ
জানিবে, অর্থাৎ সেই খারাপ কাজের
কারণে অন্তরে দুঃখ হয়। আর ইহা ঈমানের সর্বাপেক্ষা দুর্বল অবস্থা। (মুসলিম)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৪০-৭৪১
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৭
মুহা’ম্মাদ ইবনে উ’সমান ইবনে হাওশাব তাঁহার দাদা হযরত হাওশাব
রদিয়াল্লহু আ’নহু (حوْشب رضى الله عنْه)
হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লহ তায়া’লা যখন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বিজয় দিলেন তখন আমি
আব্দেশারের সহিত চল্লিশজন ঘোড়সওয়ারের এক জামাত তাঁহার খেদমতে পাঠাইলাম। তাহারা
আমার চিঠি লইয়া রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের খেদমতে পৌঁছিল। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নাম কি? তিনি বলিলেন (আমার নাম) আ’ব্দেশার (অর্থাৎ অনিষ্টকর)। তিনি এরশাদ করিলেন, না,
বরং
তুমি আ’ব্দে খায়ের (রদিয়াল্লহু
আ’নহু) (অর্থাৎ কল্যাণ
কর) (عبْد خيْر رضى الله عنْه)
(অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁহাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি মুসলমান হইয়া গেলেন।) তিনি তাঁহাকে
ইসলামের উপর বাইআত করিলেন।
বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম চিঠির উত্তর লিখিলেন এবং তাঁহার হাতে হাওশাবের (রদিয়াল্লহু আ’নহু) নিকট পাঠাইলেন। (চিঠিতে হাওশাবের প্রতি
ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত ছিল।) হাওশাব রদিয়াল্লহু আ’নহু (উক্ত চিঠি পড়িয়া) ঈমান আনয়ন করিলেন। (ইসাবাহ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৯-৭৪০
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৬
হযরত মুনীব আযদী রদিয়াল্লহু আ’নহু (منيْب الْأزْدىّ رضى الله عنْه)
বলেন, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে আপন
জাহিলিয়্যাতের যুগে দেখিয়াছি, তিনি বলিতেছিলেন, লোকেরা لآ اله الّا الله
বল, সফলকাম হইবে। আমি
দেখিয়াছি যে, তাহাদের কেহ তো
তাঁহার চেহারায় থুথু দিতেছিল, আর কেহ তাঁহার
উপর মাটি ফেলিতেছিল, আর কেহ তাঁহাকে
গালি দিতেছিল। এইভাবে অর্ধেক দিন কাটিয়া গেল। তারপর একটি মেয়ে একটি পানির পেয়ালা
লইয়া আসিল। তিনি উহা হইতে পানি লইয়া নিজের চেহারা ও উভয় হাত ধুইলেন এবং বলিলেন, হে আমার কন্যা, তুমি তোমার পিতার ব্যাপারে আকস্মাক কতল হইয়া
যাওয়ার ভয় করিও না অথবা কোন প্রকার অপমানের আশংকা করিও না। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এই মেয়েটি কে? লোকেরা বলিল,
ইনি
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের কন্যা যায়নাব রদিয়াল্লহু আ’নহু (زيْنب رضى الله عنْها)। তিনি একজন
সুশ্রী বালিকা ছিলেন। (তাবারানী,
মাজমায়ে
যাওয়ায়েদ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৯
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৫
হযরত ইবনে আ’ব্বাস
রদিয়াল্লহু আ’নহুমা (ابْن عبّاس رضى الله عنْهما) বলেন,
যখন
আল্লহ তায়া’লা এই আয়াত
নাযিল করিলেন–وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অর্থাৎ আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন করুন।
(সূরা শুআ’রাঃ ২১৪) তখন রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করিয়া উচ্চস্বরে আওয়াজ দিলেন–’হে লোকসকল, প্রত্যুষে শত্রু আক্রমন করিবে! অতএব সকলেই এখানে সমবেত হও।’ সুতরাং সমস্ত লোক তাঁহার নিকট সমবেত
হইল। কেহ স্বয়ং হাজির হইল আর কেহ নিজের
প্রতিনিধি পাঠাইল। অতঃপর এরশাদ করিলেন,
হে
বনু আব্দিল মুত্তালিব, হে বনু ফিহির, হে অমুক গোত্র! হে অমুক গোত্র! বল দেখি, যদি আমি তোমাদিগকে এই সংবাদ দেই যে, এই পাহাড়ে পাদদেশে ঘোড়সওয়ারদের এক সৈন্যদল
অপেক্ষমান রহিয়াছে যাহারা তোমাদের উপর আক্রমন করিতে চাহিতেছে, তবে কি তোমরা আমাকে সত্যবাদী মানিয়া লইবে? সকলেই বলিল, হ্যাঁ। তিনি এরশাদ করিলেন, আমি তোমাদিগকে এক কঠিন আযাব আসার পূর্বে ভয় প্রদর্শন
করিতেছি। আবু লাহাব বলিল, (নাঊযুবিল্লাহ)
তুমি চিরদিনের জন্য ধ্বংস হও। আমাদিগকে শুধু এইজন্য ডাকিয়া ছিলে? ইহার পর আল্লহ তায়া’লা تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ
সুরা নাযিল করেন। যাহাতে আল্লহ তায়া’লা বলিয়াছেন যে, আবু লাহাবের উভয় হাত ধ্বংস হউক এবং সে ধ্বংস
হউক। (মুসনাদে আহমাদ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৮-৭৩৯
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৪
হযরত আসমা বিনতে আবি বকর রদিয়াল্লহু আ’নহা (أسْماء بنْت أبى بكْر رضى الله عنْها)
বলেন, (মক্কা বিজয়ের দিন)
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করিলেন এবং মাসজিদে হারমে আসিলেন, তখন আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু তাঁহার পিতা আবু কুহাফা কে (রদিয়াল্লহু
আ’নহু) তাঁহার হাত ধরিয়া
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের খেদমতে আনিলেন। তিনি তাহাকে দেখিয়া এরশাদ করিলেন, আবু বকর, (রদিয়াল্লহু আ’নহু) বড় মিয়াকে
ঘরেই থাকিতে দিতে, আমি স্বয়ং তাহার
নিকট ঘরে উপস্থিত হইতাম। হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু আরজ করিলেন,
ইয়া
রসুলুল্লহ! আপনি তাঁহার নিকট যাওয়ার চাইতে তাঁহার হক বেশি যে, তিনি আপনার নিকট হাঁটিয়া আসিবেন। রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম তাহাকে নিজের সামনে বসাইলেন এবং তাহার বুকের উপরে হাত মুবারক বুলাইয়া
এরশাদ করিলেন, আপনি মুসলমান
হইয়া যান। সুতরাং হযরত আবু কুহাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু মুসলমান হইয়া গেলেন।
হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু যখন তাঁহার
পিতাকে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের নিকট আনিলেন তখন তাঁহার মাথার চুল সাগামাহ গাছের ন্যায় সাদা ছিল।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এরশাদ করিলেন, তাঁহার চুলের
সাদা রঙ কে (মেহেদী ইত্যাদি লাগাইয়া) পরিবর্তন করিয়া দাও। (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)
ফায়দাঃ সাগামাহ এক রকম গাছ যাহা বরফের ন্যায় সাদা হয়। (মাজমায়ে বিহারিল
আনওয়ার)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৭-৭৩৮
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ৩
হযরত আ’য়েশাহ
রদিয়াল্লহু আ’নহা (عآءشة رضى الله عنْها)
বলেন, হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু
আ’নহু জাহিলিয়াতের যুগে
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের বন্ধু ছিলেন। এক দিন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত সাক্ষাত করার
উদ্দেশ্যে ঘর হইতে বাহির হইলেন। তাঁহার সহিত সাক্ষাত হইলে বলিলেন, হে আবু কাসেম, (ইহা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কুনিয়াত বা উপনাম) কি ব্যাপার, আপনাকে আপনার কওমের মাজলিসে দেখা যায় না, আর লোকেরা আপনাকে এই বলিয়া অপবাদ দিতেছে যে, আপনি তাহাদের বাপ দাদাদের দোষারোপ করেন।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলিলেন, আমি আল্লহ তায়া’লার রসূল। তোমাকে আল্লহ তায়া’লার দিকে আহবান করিতেছি। রসুলুল্লহ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের কথা শেষ হইতেই আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু মুসলমান হইয়া গেলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর নিকট হইতে ফিরিয়া আসিলেন। হযরত আবু
বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর ইসলাম
গ্রহনের কারণের রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এত খুশি হইয়া ছিলেন যে, মক্কার উভয়
পাহাড়ের মাঝে আর কেহ কোন ব্যাপারে এত আনন্দিত ছিল না।
হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু
আ’নহু সেখান হইতে হযরত উ’সমান ইবনে আ’ফফান, হযরত তলহা’ ইবনে উ’বাইদুল্লহ,
যুবাইর
ইবনে আ’ওয়াম, সা’দ ইবনে আবি
ওয়াক্কস রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের নিকট
দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে গেলেন। ইহারাও সকলে মুসলমান হইয়া গেলেন। দ্বিতীয় দিন হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু উ’সমান ইবনে মাযঊ’ন,
আবু
উ’বাইদাহ ইবনুল জাররহ’, আ’ব্দুর রহ’মান ইবনে আ’ওফ, আবু সালামাহ
ইবনে আ’ব্দিল আ’সাদ,
আরকম
ইবনে আবিল আরকম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের লইয়া
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের নিকট হাজির হইলেন। ইহারাও সকলে মুসলমান হইয়া গেলেন। (দুই দিনে হযরত আবু
বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর দাওয়াতে
মোট নয়জন ইসলাম গ্রহণ করিলেন।) (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব
)
পৃষ্ঠা ৭৩৬-৭৩৭
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ২
হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ هريْرة رضى الله عنْه)
বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আপন চাচা (আবু তালেব) কে
(তাহার মৃত্যুর সময়) এরশাদ করিয়াছেন,
লা-ইলাহা
ইল্লাল্লহ বলুন। কিয়ামাতের দিন আমি আপনার জন্য সাক্ষী হইব। আবু তালেব জবাবে বলিলেন, যদি কুরাইশের এই খোঁটা দেওয়ার আশংকা না হইত
যে, আবু তালেব শুধু মৃত্যু
ভয়ে কালেমা পাঠ করিয়াছে, তবে আমি কালেমা
পড়িয়া তোমার চক্ষু শীতল করিতাম। এই পরিপেক্ষিতে আল্লহ তায়া’লা এই আয়াত নাযিল করিলেন–
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ
অর্থঃ আপনি যাহাকে চাহিবেন হিদায়াত দিতে পারিবেন না, বরং আল্লহ তায়া’লা যাহাকে চান হিদায়াত দান করিবেন। (সূরা
কাসাসঃ ৫৬) (মুসলিম)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল
কিতাব ) পৃষ্ঠা ৭৩৫
দাওয়াত ও তাবলীগ (দাওয়াত ও উহার ফযীলত) হাদীসঃ ১
হযরত মুআ’বিয়াহ
রদিয়াল্লহু আ’নহু (معاوية رضى الله عنْه)
বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ
করিয়াছেন, আমি তো আল্লহ তায়া’লার পয়গাম পর্যন্ত পৌঁছানেওয়ালা, আর হিদায়াত তো আল্লহ তায়া’লাই দেন। আমি মাল বন্টন করনেওয়ালা আর দান
করনেওয়ালা তো আল্লহ তায়া’লাই (তাবারানী, জামে সগীর)
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব ) পৃষ্ঠা ৭৩৫
No comments:
Post a Comment