সহীহ বাংলা হাদিস
"যে ব্যক্তি কামনা করে যে,
তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং
জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কাছে মৃত্যু
যেন এমতাবস্থায় উপস্থিত হয় যে, আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি তার ঈমান আছে । এবং মানুষের সাথে এমন আচরণই করে, তাদের থেকে সে নিজে যেমনটি আশা করে।" ( সহিহ মুসলিম :
৬৯৬৪)
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক উত্তম যে ব্যক্তি
সর্বাগ্রে সালাম দেয়। (তিরমিযীঃ ২৬৯৪)
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এক মু'মিন অন্য মু'মিনের জন্য
দেয়ালের ন্যায়। এর এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। (এ কথা বলার সময়) তিনি তাঁর এক হাতের
আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মাঝে ঢুকিয়ে দেখান। (বুখারীঃ ৪৮১, ২৪৪৬; মুসলিমঃ ২৫৮৫)
"হে আমাদের রব! আমরা যদি
ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি
আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।(রাব্বানা লা তু আখিজনা ইন্নাসিনা ওয়া আখতানা)"
(সূরা বাকারাঃ ২৮৬)। এর জবাবে আল্লাহপাক বলেনঃ "আমি করলাম।" (মুসলিমঃ
১২৬) অর্থ্যাৎ এই প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে।
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ গৃহে অন্তরীণ কুমারী
মেয়েদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যদি এমন কিছু দেখতেন যা তিনি অপছন্দ করেন,
তবে আমরা তা তাঁর চেহারায় [ফুটে উঠা অভিব্যক্তি
থেকে] সনাক্ত করতে পারতাম।
(বুখারীঃ ৬১০২; মুসলিমঃ ২৩২০)
এমন কেউ যে “আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই ও আমি আল্লাহর রসুল” – এই ঘোষণা সহ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে এবং এই ঘোষণা
সম্পর্কে কোন সন্দেহ
রাখবেনা – সে জান্নাতে
যাবে। - (সহীহ মুসলিম)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে
মুসলিম নারীগণ! কোন নারী যেন তার প্রতিবেশী নারীকে ছাগলের খুর হলেও তা উপহার দিতে
তুচ্ছ মনে না করে। - (বুখারীঃ ৬০১৭; মুসলিমঃ ১০৩০)
নবী (সাল্লাললাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ভালকাজের পথ প্রদর্শন
করল, তার জন্য রয়েছে এর সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব”
(মুসলিম)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
শাহাদাত অর্জনকারী ব্যক্তি মৃত্যুর কোন কষ্ট অনুভব করে না, তবে তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি পিঁপড়ের কামড়ে যতটুকু কষ্ট
অনুভব করে শুধুমাত্র ততটুকুই অনুভব করে। (তিরমিযীঃ ১৬৬৮, মিশকাতঃ ৩৮৩৬)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার আগে তাওবাহ্ করবে তার তাওবাহ্ আল্লাহ তা'আলা কবূল করবেন। (মুসলিমঃ ২৭০৩)
"অপদস্থ হোক সেই লোক,
যার নিকট রামাদান আসল কিন্তু তাঁর গুনাহ মাফ
হবার আগেই চলে গেল..." (তিরমিযী)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
মানুষের ভেতর দু'টি ত্রুটি থাকলে তা তাদের
কুফরীর কারণ হয়ঃ বংশের প্রতি দোষারোপ করা এবং মৃতের জন্য বিলাপ করা। (মুসলিমঃ ৬৭)
জুনদুব ইবনু 'আবদুল্লাহ ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ)
বলেছেনঃ মানুষ কে শোনানোর জন্য যে লোক কাজ করে তার দোষ-ত্রুটি আল্লাহ মানুষের
গোচরীভূত করবেন। আর মানুষ কে দেখানোর জন্য যে লোক কাজ করে তার সমস্ত দোষ-ত্রুটি
আল্লাহ মানুষকে দেখিয়ে দিবেন। (মুসলিমঃ২৯৭৮, ২৯৮৭; বুখারীঃ ৬৪৯৯)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সেই বান্দার উপর আল্লাহ অবশ্যই
সন্তুষ্ট থাকেন, যে এক গ্রাস খাদ্য গ্রহণ
করেই তাঁর প্রশংসা করে এবং এক ঢোক পানীয় পান করেই তাঁর প্রশংসা করে ('আল-হামদু লিল্লাহ' বলে) । (মুসলিমঃ ২৭৫৯)
জুনদুব ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জনৈক লোক বললো, আল্লাহর কসম! অমুক লোককে আল্লাহ মাফ করবেন না। এতে মহান
আল্লাহ তা'আলা বললেন, সে কে যে আমার নামে কসম করে বললো যে, অমুক ব্যক্তিকে আমি ক্ষমা করবো না! তাকে আমি ক্ষমা করে
দিলাম এবং তোমার সকল আমল বাতিল করে দিলাম। - মুসলিমঃ ২৬২১
বান্দাহর দু'আ কবূল করা হয় যাবৎ সে কোন গুনাহ করার বা আত্মীয় সম্পর্ক
বিছিন্ন করার দু'আ না করে এবং যাবৎ সে
জলদি না করে। প্রশ্ন করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
জলদি কি? তিনি বললেনঃ দু'আকারী বলতে থাকে, আমি অনেক দু'আ করেছি, (আমি বেশি বেশি দু'আ করেছি) কিন্তু আমার দু'আ কবূল হতে
দেখলাম না। ফলে সে হতাশ হয়ে আফসোস করে এবং দু'আ করা ছেড়ে দেয়। - (বুখারীঃ ৬৩৪০, মুসলিমঃ ২৭৩৫)
সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যদি কোন লোক পবিত্র অন্তরে
শাহাদাত লাভের উদ্দেশ্যে দু'আ করে তাহলে সে
নিজের বিছানায় মারা গেলেও তাকে আল্লাহ শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেবেন । (মুসলিমঃ
১৯০৯)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আল্লাহ তা'আলা যে লোকের মঙ্গল চান
তাকে বিপদে ফেলেন। (বুখারীঃ ৫৬৪৫)
'আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে
লোক এমন কোনো কাজ করলো যে বিষয় আমাদের কোন অনুমোদন বা সম্মতি নেই তা বর্জনীয়।
(মুসলিম - ১৭১৮)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন
লোকের মন্দ হবার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তার মুসলিম ভাইকে সে অবজ্ঞা করে। (মুসলিমঃ ২৫৬৩, ২৫৬৪)
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট যে কথাটি সর্বাধিক
প্রিয় সেটি কি আমি তোমাকে বলবো না ? অবশ্যই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথাটি হচ্ছে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
। (মুসলিমঃ ২৭৩১)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে লোক মানুষকে দয়া
করে না, তাকে আল্লাহ তা'আলা দয়া করেন না । (বুখারীঃ ৬০১৩,৭৩৭৬, মুসলিমঃ ২৩১৯)
বুরাইদাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অন্ধকারে
পায়ে হেঁটে মসজিদে আগমনকারীদেরকে তোমরা ক্বিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ আলোর সুসংবাদ
দাও । (তিরমিযীঃ ২২৩, মিশকাতঃ ৭২১,৭২২)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন করো, কঠিন পন্থা
অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও,
বিরক্তি সৃষ্টি করো না । (বুখারীঃ৬৯, মুসলিমঃ১৭৩৪)
চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো,
জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে
অথবা পরিত্যাগ করে । (বুখারী, মুসলিম)
মু'আবিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আমি বলতে শুনেছিঃ মুয়ায্যিনগণ কিয়ামাতের দিন
মানুষদের মাঝে সবচাইতে লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট হবে । (মুসলিমঃ ৩৮৭)
'আব্দুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সমগ্র দুনিয়াটাই সম্পদ। আর দুনিয়ার সর্বোত্তম
সম্পদ হল সৎকর্মপরায়ণা স্ত্রী। ( মুসলিমঃ ১৪৬৭)
হযরত আবু কাতাদাহ সালামী
(রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের
কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে বসার আগে সে যেন দুই রাকাত নামায পরে নেয়। বুখারীঃ প্রথম
খন্ড, অধ্যায়ঃ ০৮ (নামায),
হাদীসঃ ৪৩৫।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ও
আখিরাতের প্রতি যে লোক বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে । (বুখারীঃ
৬০১৮, মুসলিমঃ ৪৭, ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির বক্তব্য এ ব্যাপারে স্পষ্ট যে, কোন কথায় উপকার ও কল্যাণ নিহিত না থাকলে তা না বলাই কর্তব্য
। অর্থাৎ- যেসব কথার মধ্যে কল্যাণ ও উপকার রয়েছে সেগুলো এ পর্যায়ভুক্ত । কিন্তু
যদি কল্যাণের দিকটা সন্দেহপূর্ণ হয় তবে চুপ থাকাই ভাল ।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ যখন বান্দা ভাল-মন্দ চিন্তা না করেই কোন কথা
বলে, তখন সে নিজেকে তার কারণে জাহান্নামের এত অতলে
নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের সমান । (বুখারীঃ ৬৪৭৭,৬৪৭৮, মুসলিমঃ ২৯৮৮)
'আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আল্লাহ তা'আলা কোমল ও দয়াবান । তাই
প্রতিটি কাজে তিনি কোমলতা ও দয়া পছন্দ করেন । (বুখারীঃ ৬২৫৬,৬৯২৭, মুসলিমঃ ২১৬৫)
উকবা ইবনে আমির (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে
শুনেছিঃ তোমার রব পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়ায় অবস্থিত মেষপালকের প্রতি সন্তুষ্ট হন,
যে সালাতের জন্য আযান দেয় এবং সালাত আদায় করে ।
মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার এই বান্দাকে
দেখ, সে আযান দিচ্ছে, সালাত কায়েম করছে এবং আমাকে ভয় করছে ।
ইবনে মাসঊ'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্তেকের জন্য জান্নাত তার
জুতার ফিতার চেয়েও কাছে, আর জাহান্নামও
তেমনি । (বুখারীঃ ৬৪৮৮)
আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন হাই তোলে, সে যেন হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে । কারণ (মুখ খোলা পেলে
তাতে) শয়তান প্রবেশ করে । (মুসলিমঃ ২৯৯৫)
আবূ মূসা (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমরা রোগীকে বা অসুস্থকে দেখতে যাও, ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও এবং বন্দীদেরকে মুক্ত করো । (বুখারীঃ ৩০৪৬, ৫৬৪৯)
আবূ আইয়ূব খালিদ ইবনু
যাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যদি তোমরা গুনাহ্ না করতে তাহলে আল্লাহ তা'আলা এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ্ করে ক্ষমা চাইতো আর তিনি তাদের কে ক্ষমা করে
দিতেন। - মুসলিমঃ ২৭৪৮
'আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত
ব্যক্তিদেরকে তোমরা গালি দিও না । কেননা যা কিছু তারা করেছে তার ফলাফল প্রাপ্তির
জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে । (বুখারীঃ ১৩৯৩)
'আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
মুয়াজ্জিন ছিলেন। আর তিনি ছিলেন অন্ধ। [সহীহ ও যঈফ সুনান আবু দাউদ। অনুচ্ছেদ - ৪২।
হাঃ ৫৩৫]। এ হাদীসটি অন্ধ ব্যক্তির আযান দেয়া প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হল।
আবূ বাকরাহ্ নুফাই ইবনুল
হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীন যেদিন সৃষ্টি করেছেন যুগ বা সময় সেদিন হতে
তার নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তন করছে। [বুখারীঃ ৩১৯৭, ৪৪৬২; মুসলিমঃ ১৬৭৯]।
এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ।
`উমার ইবনু আবূ সালামাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
আমাকে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ শুরুতে বিসমিল্লাহ
বলো, ডান হাতে খাদ্য খাও এবং তোমার সামনের খাবার হতে
খাও। [বুখারীঃ ৫৩৭৬, মুসলিমঃ ২০২২]। এ হাদীসটি
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হল।
ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাঃ)
বলেছেনঃ অকারণে কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধবংস হয়েছে। এ কথা তিনি তিনবার বললেন।
(মুসলিমঃ ২৬৭০)। এ হাদীসটি ইবাদাত-বন্দেগীতে ভারসাম্য রাখা প্রসঙ্গে শিরোনামের
অধীন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ এমন অনেক ব্যক্তি জান্নাতে যাবে যাদের
অন্তর পাখির অন্তরের মতো হবে (অর্থাৎ - তাদের মন নরম এবং আল্লাহর উপর তারা ভরসা
করে) । (মুসলিমঃ ২৮৪০)
মু'আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ যে লোকের সর্বশেষ কথা হয় 'লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ', সে জান্নাতে
যাবে। - আবূ দাউদঃ ৩১১৬, হাকিমঃ ১/৩৫১,
সহীহ আল-জামিঃ ২৪৭৯।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ অশোভনীয় কাজ হতে বিরত থাকা
মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসটি হাসান। তিরমিযী ও অন্যান্য
মুহাদ্দিসগণ এটি বর্ণনা করেছেন। - তিরমিযী (হাঃ ২৩১৭), সহীহ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩২১১)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহ তোমাদের দেহ ও মুখমন্ডলের প্রতি ফিরেও দেখেন না,
বরং তোমাদের অন্তরও আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন
। (মুসলিমঃ২৫৬৪)
কাব ইবনে ইয়াজ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক জাতির জন্য
একটা ফিতনাহ (পরীক্ষার বস্তু) আছে । আমার উম্মাতের ফিতনাহ হলো সম্পদ । (সহীহ
আত-তিরমিযীঃ ১৯০৫/২৩৩৬)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিই ঈমানদার হতে পারে
না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে যা নিজের জন্য পছন্দ করে
তার ভাই এর জন্য তাই পছন্দ করে । (বুখারীঃ ১৩, মুসলিমঃ ৪৫)
আবু মাস’উদ বাদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ সওয়াব লাভের আশায় কোন ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য যা ব্যয়
করে তা সাদাকা (স্বরূপ) । (বুখারীঃ ৫৫, মুসলিমঃ ১০০২)
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ উত্তম কোন কাজই অবজ্ঞা করো
না, তা যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে
সাক্ষাৎ হয় । (মুসলিমঃ ২৬২৬)
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-এর একদল সাহাবী খাইবারের যুদ্ধের দিন তার নিকট
এলেন । তারা বলল, অমুক লোক শহীদ, অমুক লোক শহীদ । এভাবে তারা এক লোকের পাশ দিয়ে যাবার সময়
বলল, অমুক লোক শহীদ । নবী (সাঃ) বললেনঃ কখনও নয়,
একটি চাদর অথবা একটি আবার (এক ধরনের ঢিলা জামা
বিশেষ) জন্য আমি তাকে জাহান্নামী দেখতে পাচ্ছি । এটা সে অন্যায়ভাবে আত্মসাত করেছিল
। (মুসলিমঃ ১১৪)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সাবধান! ধারণা-অনুমান থেকে বিরত
থাকো । কেননা ধারণা-অনুমান সর্বাধিক বড় মিথ্যা কথা । (বুখারীঃ ৫১৪৪,৬০৬৬, মুসলিমঃ ২৫৬৩)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোকের
মিথ্যাবাদী হ্বার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যা সে শুনে অন্যের নিকট তাই বলে বেড়ায়। (মুসলিমঃ ৫)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে
লোকের চরিত্র ও ব্যবহার সবচেয়ে ভাল ঈমানের দিক দিয়ে সে-ই পরিপূর্ণ মু'মিন। তোমাদের মধ্যে সেসব ব্যক্তি উত্তম যারা তাদের
স্ত্রীদের জন্য উত্তম। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি
হাসান সহীহ। তিরমিযীঃ ৯২৮/১১৬২
আবূ যার (রা:) থেকে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলা হলঃ
আপনার কি মতামত, কোন ব্যক্তি উত্তম কাজ
করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মু'মিনের জন্য এটা অগ্রিম সু-সংবাদ। (মুসলিমঃ ২৬৪২)
আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) মিসওয়াক করে আমাকে মিসওয়াকটি দিতেন একে ধোয়ার জন্য, অতঃপর আমি সেটা দিয়ে আগে মিসওয়াক করে এরপর সেটা ধুয়ে তাঁকে
ফেরত দিতাম। আবু দাউদ। আলবানীর মতে হাসান.
আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ জুতা পরিধান, চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন ও তাঁর সকল বিষয়াদির ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা নবীকে
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চমৎকৃত করত। (বুখারী,মুসলিম)
আলী (রা:) থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ বান্দা যখন মিসওয়াক করে সালাতে দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তাঁর পেছনে
দাঁড়িয়ে তার কিরাত শুনতে থাকে, এরপর সে তার
নিকটবর্তী হয় এবং শেষপর্যন্ত তাঁর মুখ তার মুখের ওপর রাখে, সুতরাং তার মুখ থেকে কুরআনের যে অংশই বের হয়, তা ফেরেশতার অভ্যন্তরে চলে যায়, সুতরাং তোমরা তোমাদের মুখগুলোকে কুরআনের জ্ন্য পরিচ্ছন্ন
করে নাও। বাযযার। আলবানীর মতে সহীহ।
''তোমরা আমার প্রশংসার
ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না যেমনিভাবে খ্রিষ্টানরা মরিয়মের পুত্রের ব্যাপারে
বাড়াবাড়ি করেছে, কেননা নিশ্চয়ই আমি কেবলই
তাঁর বান্দা, সুতরাং বলঃ আল্লাহর
বান্দা ও তাঁর রাসূল।" (বুখারীঃ ৩৪৪৫)
"...এবং নিশ্চয়ই আলেমগণ
নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীগণ দীনার কিংবা
দিরহামের উত্তরাধিকার দিয়ে যাননি, বরং জ্ঞানের
উত্তরাধিকার দিয়ে গিয়েছেন, অতএব যে তা গ্রহণ
করল, সে এক বিরাট সৌভাগ্যের অধিকারী হল।'' আহমদ, আবু দাউদ,
তিরমিযী ও অন্যান্য। আলবানীর মতে সহীহ।
আহলে কিতাব ও আমাদের
সিয়ামের পার্থক্য হল সেহরী। (মুসলিমঃ ১০৯৬)
আবূ মুহাম্মাদ জুবাইর
ইবনু মুত্'ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। সুফ্ইয়ান (রাঃ) তার বর্ণনায় বলেন, অর্থ্যাৎ - আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। (বুখারীঃ ৫৯৮৪,
মুসলিমঃ ২৫৫৬)
আবূ সা'ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন কোন অসৎ কাজ হতে দেখে তা যেন সে হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করে। যদি এই ক্ষমতা সে না রাখে তাহলে যেন মুখের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ
করে। যদি এই ক্ষমতাটুকুও সে না রাখে তবে যেন হৃদয়ের মাধ্যমে এটা প্রতিরোধ করার
চেষ্টা করে (বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে)। আর এটা হল ঈমানের দুর্বলতম স্তর।
(মুসলিমঃ ৪৯)
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট যে কথাটি সর্বাধিক
প্রিয় সেটি কি আমি তোমাকে বলব না? অবশ্যই আল্লাহর
নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথাটি হচ্ছে সুবহানল্লাহি ওয়া বিহামদিহি। (মুসলিমঃ ২৭৩১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেনঃ "অনারবদের উপর আরবদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আরবদের উপরেও অনারবদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, নেই সাদার উপরে কালোদের অথবা কালোর উপরে সাদাদের।
শ্রেষ্ঠত্ব শুধু তাক্বওয়াতে।" [মুসনাদে আহমাদ ৫/৪১১] ইবন তাইম্যিয়া কিতাবুল
ইক্বতিদা গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যদি কোন লোক পবিত্র অন্তরে
শাহাদাত লাভের উদ্দেশ্যে দু'আ করে তাহলে সে
নিজের বিছানায় মারা গেলেও তাকে আল্লাহ শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেবেন । (মুসলিমঃ
১৯০৯)
জুনদুব ইবনু 'আবদুল্লাহ ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ)
বলেছেনঃ মানুষ কে শোনানোর জন্য যে লোক কাজ করে তার দোষ-ত্রুটি আল্লাহ মানুষের
গোচরীভূত করবেন। আর মানুষ কে দেখানোর জন্য যে লোক কাজ করে তার সমস্ত দোষ-ত্রুটি
আল্লাহ মানুষকে দেখিয়ে দিবেন। (মুসলিমঃ২৯৭৮, ২৯৮৭; বুখারীঃ ৬৪৯৯)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহ তোমাদের দেহ ও মুখমন্ডলের প্রতি ফিরেও দেখেন না,
বরং তোমাদের অন্তরও আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন
। (মুসলিমঃ২৫৬৪)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে
মুসলিম নারীগণ! কোন নারী যেন তার প্রতিবেশী নারীকে ছাগলের খুর হলেও তা উপহার দিতে
তুচ্ছ মনে না করে। - (বুখারীঃ ৬০১৭; মুসলিমঃ ১০৩০)
'আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আমি কখনো
অট্টহাসি দিতে দেখিনি যাতে তাঁর মুখগহ্বর প্রকাশ পায়। সাধারণতঃ তিনি মুচকি হাসি
দিতেন। (বুখারীঃ ৪৮২৮, মুসলিমঃ ৮৯৯/১৬)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে উহূদের যুদ্ধের
দিন এক লোক প্রশ্ন করল, আপনার কি ধারণা
যদি আমি নিহত হই তবে আমি কোথায় থাকব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ''জান্নাতে''। তখন তার হাতের খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে সে যুদ্ধ করল, অবশেষে শহীদ হয়ে গেল। (বুখারীঃ ৪০৪৬, মুসলিমঃ ১৮৯৯)
আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে
খাত্তাব (রাঃ) বর্ননা করেন, আমি রাসূলে আকরাম
সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সকল কাজের প্রতিফল কেবল নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই
নিয়্যাত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
(সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ
ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত
দুনিয়া হাসিল করা কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হবে, তার হিজরত সে লক্ষ্যেই নিবেদিত হবে। -[বুখারী: ১/২(১),
মুসলিম: ৬/৪৮(১৯০৭)]
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
একটি সেনাদল কা'বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আক্রমন চালাতে যাবে। তারা যখন সমতল
ভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সামনের ও
পিছনের সমস্ত লোকসহ ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। হযরত আয়েশা(রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে
আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আগের ও পরের সমস্ত লোকসহ তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে? যখন তাদের মধ্যে অনেক শহরবাসী থাকবে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় ও
সাগ্রহে তাদের সাথে শামিল হবে না? রাসূলে আকরাম
সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগের ও
পরের সমস্ত লোককেই ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর লোকদের নিয়্যাত অনুসারে
তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। -[বুখারী: ৩/৮৬(২১১৮) ও মুসলিম: ৮/১৬৮(২৮৮৪)] এখানে
শব্দাবলী শুধু বুখারী থেকে উদ্বৃত করা হয়েছে।
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা
করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর
আর হিজরত করার অবকাশ নেই। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত রয়েছে। তোমাদেরকে যখন
জিহাদের জন্য ডাক দেয়া হবে, তখন তোমরা অবশ্যই
ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। (বুখারী ও মুসলিম) এ হাদীসের তাৎপর্য এই যে, এখন আর মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে হিজরত করার কোন প্রয়োজন নেই।
এই কারনে যে, মক্কা এখন দারুল ইসলামে
পরিণত হয়েছে।
হযরত জাবের ইবনে
আবদুল্লাহ্ আল-আনসারী (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমরা নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে
এক যুদ্ধে শরীক হলাম, তখন তিনি বলেন, মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর কর এবং যে উপত্যকা অতিক্রম কর, সেখানেই তারা তোমাদের সঙ্গে থাকে। রোগ-ব্যাধি তাদেরকে আটকে
রেখেছে। (মুসলিম) অন্য বর্ণনা মতে, তারা সওয়াবে
তোমাদের সাথেই শরীক থাকবে। ইমাম বুখারী এই হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে এভাবে
বর্ননা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি বলেনঃ আমরা মদীনায় আমাদের পেছনে এমন কিছু
লোক রেখে গিয়েছিলাম, আমরা যে গিরিপথ এবং যে
ময়দানই অতিক্রম করেছি তারা (যেন) আমাদের সাথেই ছিল। এক ধরনের ওযর তাদেরকে আটকে
রেখেছে।
হযরত মা’ন ইবনে ইয়াযিদ ইবনে আখ্নাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বর্ণনা
করেনঃ (মা’ন, তার পিতা, দাদা সবাই সাহাবী
ছিলেন) আমার পিতা ইয়াজিদ সদকা করার জন্য (স্বর্ন মুদ্রা) বের করলেন এবং মসজিদে
গিয়ে এক ব্যক্তিকে তা দিয়ে দিলেন। আমি লোকটির কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে আমার পিতার
কাছে চলে এলাম। আমার পিতা বললেনঃ আল্লাহর কসম! এটা তো আমি তোমাকে দেয়ার মনস্থ
করিনি। এরপর আমরা এ বিষয়টাকে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
পেশ করলাম। তিনি বলেনঃ হে ইয়াজিদ! তুমি তোমার নিয়্যাতে সওয়াব পেয়ে গেছো আর হে মা’ন! তুমি যে মাল নিয়েছো, তা তোমারই। (বুখারী)
হযরত আবু ইসহাক সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্আস (রা) বর্ননা করেনঃ আমি বিদায় হজ্জের
বছরে খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার খোঁজ খবর নিতে এলেন। আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার রোগের তীব্রতা
আপনি লক্ষ্য করছেন। আমি অনেক ধন-মালের অধিকারী। কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী
শুধুমাত্র আমার মেয়েই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করে দিতে
পারি? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘না’। আমি নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে অর্ধেক
পরিমাণ (দান করে দেই)? তিনি বলেনঃ না।
আমি পুনরায় নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে এক
তৃতীয়াংশ (দান করে দেই)? তিনি বলেনঃ ‘হাঁ’, এক -তৃতীয়াংশ দান
করতে পার।’ অবশ্য এটাও অনেক বেশি
অথবা বড়। তোমাদের উত্তরাধিকারীগণকে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় না রেখে তাদেরকে বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়াই শ্রেয়,
যেন তাদেরকে মানুষের সামনে হাত পাততে না হয়।
তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দিবে, তার সবকিছুরই সওয়াব (প্রতিদান) তোমাকে দেয়া হবে। এরপর আমি
(বর্ননাকারী আবু ইসহাক) বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার সঙ্গী সাথীগণের (মদীনায়)
চলে যাবার পর আমি কি পেছনে (মক্কায়) থেকে যাবো? তিনি বললেনঃ পিছনে থেকে গেলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
যে কাজই করবে, তাতে তোমার সম্মান ও
মর্যাদা অত্যন্ত বেড়ে যাবে। আশা করা যায়, তুমি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে কিছু লোক তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অন্য কিছু লোক তোমার দ্বারা কষ্ট পাবে। হে আল্লাহ!
আমার সাহাবীদের হিজরত পূর্ণ করে দাও এবং তাদেরকে ব্যর্থতার কবল থেকে রক্ষা কর। তবে
সা’দ ইবনে খাওলা যথার্থই কৃপার পাত্র। মক্কায় তাঁর
মৃত্যু ঘটলে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে সমবেদনা জ্ঞাপন
করেন যে, তিনি হিজরতের সৌভাগ্য
থেকে বঞ্চিত হন। [বুখারী: ১/২২(৫৬) ও মুসলিম: ৫/৭১(১৬২৮)(৫)]
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদেও
বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) আদিষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল,
আর তারা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে।
তারা এগুলো করলে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের
হক (অপরাধের শাস্তি) তাদের উপর থাকবে। আর তাদের প্রকৃত ফয়সালা আল্লাহ তাআলার উপর
সমর্পিত। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
আবূ আব্দুল্লাহ তারেক
ইবনে উশায়েম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ্ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব বস্তুর পূজা করা হয়, সে সেগুলোকে অস্বীকার করে, তার জান ও মাল নিরাপদ হয়ে গেল; আর তার হিসাব মহান আল্লাহর উপর সমর্পিত।ইমাম মুসলিম হাদীসটি
রিওয়ায়েত করেছেন।
_____________________________
[أخرجه : مسلم 1/39 ( 23 ) ( 37 )]
[মুসলিম: ১/৩৯(২৩)(৩৭)]
আবূ মাবাদ মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি বলেন যদি কোন
কাফেরের সাথে আমার মোকাবেলা হয় এবং পারস্পরিক যুদ্ধে সে আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য
একটি গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে, আমি আল্লাহর জন্য
ইসলাম গ্রহণ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার ঐ
কথা বলার পর আমি কি তাকে হত্যা করব? তিনি বলেনঃ তাকে হত্যা করো না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো আমার দুই হাতের একটি কেটেছে,
অতঃপর একথা বলেছে। তিনি বলেনঃ তাকে হত্যা করো
না। কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা করো, তাহলে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে যে মর্যাদায় ছিলে, সে সেই মর্যাদায় পৌঁছে যাবে; আর যে কলেমা সে পাঠ করেছে, সেই কলেমা পাঠের পূর্বে সে যে স্তরে ছিল; তুমি(তাকে হত্যা করলে) সেই স্তরে নেমে যাবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম
মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। أنه بمنزلتك কথার অর্থ হলো: ইসলাম গ্রহণ করার
কারণে সে ব্যক্তির রক্তপাত হারাম হয়ে গেছে। আর أنه بمنزلته কথার অর্থ হলো: তুমি তাকে হত্যা করার
দরুন তার ওয়ারিসদের পক্ষ থেকে কিসাস স্বরূপ তোমার রক্ত প্রবাহিত করা তাদের জন্য
বৈধ হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি তার মত কাফের হয়ে যাবে না। আল্লাহই ভালো জানেন।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 5/109 ( 4019 ) ،
ومسلم 1/66 ( 95 ) ( 155 )]
[বুখারী: ৫/১০৯(৪০১৯),
মুসলিম: ১/৬৬(৯৫)(১৫৫)]
উসামা ইবনে যায়েদ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহায়না গোত্রের
খেজুরের বাগানে প্রেরণ করেন। আমরা প্রত্যুষে তাদের পানির ঝর্ণা ঘেরাও করি। অতঃপর
আমি ও জনৈক আনসারী তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলি এবং তার উপর চড়াও হই। অমনি সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। (একথা শুনেই) আনসারী থেমে যায়; আর আমি আমার বর্শার আঘাতে তাকে হত্যা করি। অতঃপর আমরা
মদিনায় ফিরে এলে সেই হত্যার ঘটনা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে পৌঁছল। তিনি আমাকে বললেনঃ হে
উসামা সে লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ্ বলার পরও তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া
রাসূলুল্লাহ্! তা তো ছিল জান বাঁচানোর জন্য। তিনি বললেনঃ সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? অতঃপর তিনি
বারবার একথা বলতে লাগলেন যে, আমি যদি
ইতোপূর্বে মুসলমান না হতাম (তা হলে এই গুনাহ আমার ভাগ্যে লেখা হতো না)। ইমাম
বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে লা ইলাহা বলল, আর তুমি তাকে
হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সে তো তরবারির ভয়ে এ কথা বলেছে। তিনি
বললেনঃ তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখলে না কেন, তাহলে জানতে পারতে সে তা তার অন্তর থেকে বলেছে কি না! তিনি বরাবর এ কথা বলতে লাগলেন,
এমনকি আমি আক্ষেপ করতে লাগলাম, আমি যদি আজই মুসলমান হতাম।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 9/4 ( 6872 ) ، ومسلم
1/67 ( 96 ) ( 158 ) و68 ( 96 ) ( 159
)]
[বুখারী: ৪/৯(৬৮৭২),
মুসলিম: ১/৬৭(৯৬)(১৫৮) ও ৬৮(৯৬)(১৫৯)]
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী
প্রেরণ করলেন। তাদের মোকাবেলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে
মুসলমানদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করতো। মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের
অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়েদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি
উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তদুপরি তিনি তাকে
হত্যা কর ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদ বাহক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি
কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি
তাকে(উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা
করলে কেন? তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ!
সে তো মুসলমানদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও
করেছে। তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি(সুযোগ পেয়ে) যখন আক্রমণ করি(সে
তরবারি দেখে ফেলে), অমনি বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন,
হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করুন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে?
তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি যে,
“কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি
জবাব দিবে?
(ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি
রিওয়ায়েত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 1/68 ( 97 ) ( 160 )]
[মুসলিম: ১/৬৮(৯৭)(১৬০)]
আব্দুল্লাহ উতবা ইবনে
মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা
হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো
তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভাল কাজের প্রকাশ
ঘটাবে, আমরা তাত বিশ্বাস করবো
এবংতাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেখার আমাদের দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের
প্রকাশ ঘটাবে অর্থাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে,তবে সে যদিও বলে যে, তার অভ্যন্তরীণ
অবস্থা খুবই ভাল, তবুও আমরা তার কথা মানবো
না এবং তার কথা বিশ্বাসও করবো না। (ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[أخرجه : البخاري 3/221 ( 2641 )]
[বুখারী: ৩/২২১ ( ২৬৪ )]
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার
মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে
পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়।
অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার
আদেশ করা হয়। তাহলোঃ তার রিযিক, তার হায়াত,
তার আমল ও সে দুর্ভাগ্যবান হবে অথবা
সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! তোমাদের কেউ
জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও
জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে
উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের
কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও
জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে
উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। (ইমাম বুখারী:
৩২০৮ ও ইমাম মুসলিম: ২৬৪৩ এ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 9/165 ( 7454 ) ،
ومسلم 8/44 ( 2643 ) ( 1 )]
[বুখারী: 9/165 (
7454 ), মুসলিম: 8/44 ( 2643 )]
ইবনে মাসউদরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার
লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের
জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং এ লাগাম ধরে এটাকে টানবে। (ইমাম মুসলিম এ
হাদীস উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
[মুসলিম: 8/149 (
2842 ) ( 29 )]
নুমান ইবনে বাশীর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির
শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে
আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং
তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই
জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/144 ( 6562 ) ،
ومسلم 1/135 ( 213 ) ( 363 )و( 364
)]
[বুখারী: 8/144 ( ৬৫৬২ ), মুসলিম: 1/135
( ২১৩ ) ( 363 ) ও ( 364 )]
সামুরা ইবনে জুনদুব
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
জাহান্নামের আগুনে দোযখীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে
(প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হবে)। (ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি
উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
[মুসলিম: 8/150 (
2845 ) ( 33 )]
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত
ডুবে যাবে। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর রাশুহ্ অর্থ ঘাম।]
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/207 ( 4938 ) ،
ومسلم 8/157 ( 2862 ) ( 60 )]
[বুখারী: 6/207 (
4938 ), মুসলিম: 8/157 ( 2862 )]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ
আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি যা
জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব
কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। একথা শুনে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ কাপড়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। (ইমাম
বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে
কিছু শুনতে পেয়ে একটি।ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম
পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো আর মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা
জানি, তোমরাও যদি তা জানতে
পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদেও উপর এদিনের মতো কঠিন দিন
আর আসেনি। তাই তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন। আল খানিন অর্থ
নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/68 ( 4621 ) ، ومسلم
7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
[বুখারী: 6/68 (
4621 ), মুসলিম: 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের
দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি
নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে এক মাইলের
ব্যবধানে অবস্থান করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানিনা, মাইল বলতে এটা কি জমিনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে
নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সাঃ আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের
ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের কেউ গোড়ালি পর্যন্ত, কেউ হাটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম
পড়ানো হবে। একথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা
করেন অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত
করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[মুসলিম: 8/158 (
2864 ) ( 62 )]
[1- أي مَعقِد الإزار . النهاية 1/417]
[1. @]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম
বেরুবে যে, তা জমীনে সত্তর গজ উঁচু
হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/138 ( 6532 ) ،
ومسلم 8/158 ( 2863 ) ( 61 )]
[বুখারী: 8/38 (
6532 ), মুসলিম: 8/158 ( 2863 )]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন
বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের শব্দ তা কি
তোমরা জানো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার
রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবদি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার গর্তে পতিত হয়েছে।তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে
পেলে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2844 )]
[মুসলিম: 8/150 (
2844 )]
[1- قال النووي في شرح صحيح مسلم 9/154
عقيب ( 2845 ) : (( معناها السّقطة
))]
[১. ইমাম নওয়াবী @]
আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে
কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডাইনে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই
দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়ে ও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না,
আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম
ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম
থেকে আত্মরক্ষা করো। (ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[انظر الحديث ( 139 )]
[দেখুন হাদীস নং ( 139
)]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চঃস্বরে শব্দ করছে,
আর এর উচ্চ স্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা
তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর
শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে
পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই
হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা
স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয়
চাওয়ার জন্য বনে-জঙ্গলে বেরিয়ে যেতে। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি
বলেন, এ হাদীসটি হাসান। )
_____________________________
[أخرجه : ابن ماجه ( 4190 ) ، والترمذي
( 2312 ) وقال : (( حديث حسن غريب
))]
[ইবনে মাজাহ্: ( 4190
), তিরিমিযী: ( 2312 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
আবূ বারযা নাদলা ইবনে
উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই
দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে
জিজ্ঞেস করা হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে
অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে
লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে
অর্জন করেছে এবং কিসে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে? (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীস টি হাসান ও সহীহ।)
_____________________________
[رواه الترمذي: 2417 ، وَقالَ : (( حديث
حسن صحيح ))]
[তিরমিযী: ( 2417 )
তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ্।]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা(যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে” (সূরা যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি
জানো সেদিন জমীন কি বর্ণনা করবে? উপস্থিত সবাই
বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে
তা এই যে, তার উপরে নর-নারী কি কি
করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই দিন এই এই কাজ করেছ। এগুলো হলো তার বর্ণনা। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি
উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।]
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2429 ) ، والنسائي
في " الكبرى " ( 11693 ) وقال الترمذي عنه : (( حديث حسن غريب صحيح ))
على أنَّ سند الحديث ضعيف]
[তিরমিযী: ( 2429
), নাসায়ী আলকোবরা: ( 11693 ) এবং তিরমিযী এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব
সহীহ্ @]
সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে
পারি? অথচ শিঙ্গাধারী ফেরেশতা
(ইসরাফীল ) মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দিবেন? মনে হলো যেন একথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হলেন।
অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, আল্লাহই আমাদের
জন্য যথেষ্ঠ এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক। (ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন,
হাদীসটি হাসান।
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2431 )]
[তিরমিযী: ( 2431
)]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুও
লুটতরাজ কে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা
হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনো রাখো, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত। (ইমাম তিরমিযী হাদীসটি
উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস। )
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2450 ) وقال : ((
حديث حسن غريب ))]
[তিরমিযী: ( 2450 )
তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
হযরত আইশা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকদের
খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে এবং খাতনাহীন
অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,ইয়া রাসূলুল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে?
তিনি বলেনঃ হে আইশা! মানুষ যা কল্পনা করে
সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো
ভয়াবহ হবে। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/136 ( 6527 ) ،
ومسلم 8/156 ( 2859 ) ( 56 )]
[বুখারী: 8/136 (
6527 ), মুসলিম: 8/156 ( 2857 ) ( 56 )]
No comments:
Post a Comment